বাংলাহান্ট ডেস্ক: আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের (Afghanistan-Pakistan) সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আবহ। রবিবার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ প্রকাশ্যে আফগানিস্তানের দিকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। আফগানিস্তানের ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানের সেনাঘাঁটিতে হামলার অভিযোগ তুলে শরিফ বলেন, “পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে কোনও আপস নয়। প্রত্যেক উসকানির জবাব শক্ত হাতে এবং কার্যকরভাবে দেওয়া হবে।” প্রধানমন্ত্রী সরাসরি অভিযোগ তোলেন, তালিবান সরকার নিজের ভূখণ্ডকে জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে ছেড়ে দিয়েছে, যারা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
রণক্ষেত্র আফগানিস্তান ও পাকিস্তান (Afghanistan-Pakistan) সীমান্ত:
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের (Afghanistan-Pakistan) তালিবান প্রশাসন সম্পূর্ণ বিপরীত দাবি করেছে। তাদের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, আফগান সেনারা পাকিস্তানের অন্তত ২৫টি সামরিক পোস্ট দখল করেছে। এই সংঘর্ষে ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং আরও ৩০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি তালিবানের। মুজাহিদ আরও বলেন, “পাকিস্তান বারবার আফগান আকাশসীমা ও সীমান্ত লঙ্ঘন করছে। এই হামলা তারই জবাব।”
আরও পড়ুন: পিসিওএসের সমস্যায় সাহায্য করতে পারে এই ৬ সাপ্লিমেন্ট, চিকিৎসকদের মতামত
এই সংঘর্ষ এমন এক সময় ঘটেছে যখন সম্প্রতি আফগান প্রশাসন অভিযোগ তোলে যে পাকিস্তান কাবুল ও পূর্ব আফগানিস্তানের (Afghanistan-Pakistan) একটি বাজার এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে। যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। পাকিস্তান সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তে মোতায়েন সমস্ত নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
আফগান সরকারি সংবাদমাধ্যমের দাবি, আফগান বাহিনীর পাল্টা হামলায় অন্তত ১৫ জন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু হয়েছে। তবে পাকিস্তানের (Afghanistan-Pakistan) তরফে এখনও এই মৃত্যুর কোনও সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সূত্রের খবর, সীমান্তের একাধিক পয়েন্টে তীব্র গুলিবিনিময় চলছে এবং সাধারণ নাগরিকদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ফের মহামারির ভ্রুকুটি! হাসপাতালে ভর্তি ৪,০০০-এর বেশি মানুষ, ভয়াবহ সঙ্কট এই দেশে
বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের (Afghanistan-Pakistan) এই সীমান্ত সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়, তবে এবার পরিস্থিতি অনেক বেশি উত্তেজনাপূর্ণ। কারণ, দুই দেশের সম্পর্ক গত কয়েক মাস ধরেই ক্রমশ তলানিতে ঠেকেছে। আফগান মাটিতে ইসলামাবাদ-বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠী ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ (টিটিপি)-এর সক্রিয়তা পাকিস্তানের প্রশাসনকে চরমভাবে চিন্তিত করে তুলেছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, কাবুল সরকার এই সংগঠনকে পরোক্ষভাবে আশ্রয় দিচ্ছে। অন্যদিকে, কাবুলের বক্তব্য, পাকিস্তান তাদের সীমান্তে বারবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী আচরণ করছে। এ অবস্থায় সীমান্তে চলা সংঘর্ষ ভবিষ্যতে আরও বড় সঙ্কটের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
বর্তমানে সীমান্তে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। দুই দেশের (Afghanistan-Pakistan) মধ্যেকার কূটনৈতিক আলোচনাও স্থবির। আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো, এই সংঘর্ষ থামাতে শান্তিপূর্ণ সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু উভয় পক্ষই আপাতত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায়, দক্ষিণ এশিয়ার এই সীমান্ত পরিস্থিতি আরও বিস্ফোরক হয়ে উঠছে বলে মনে করা হচ্ছে।