বাংলাহান্ট ডেস্ক: আমেরিকার রাজনৈতিক মঞ্চ ফের অগ্নিগর্ভ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) সরকারের বিরুদ্ধে ফের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানালেন লক্ষাধিক মানুষ। “No Kings” নামে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, মায়ামি ও লস অ্যাঞ্জেলস-সহ একাধিক শহরে হাজার হাজার মানুষ ট্রাম্প-বিরোধী স্লোগানে মুখর। গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে দেশজুড়ে প্রায় সাত লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমেছেন বলে জানা গেছে।
ট্রাম্প (Donald Trump) বিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত আমেরিকা
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ট্রাম্প (Donald Trump) সরকার সংবাদমাধ্যম, বিরোধী দল ও সংবিধানের মূল মূল্যবোধের উপর আঘাত হানছে। তাঁর কট্টর অভিবাসন নীতি, প্রশাসনের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব এবং একনায়কতন্ত্রের প্রবণতা আমেরিকার গণতন্ত্রের ভিত্তি নড়িয়ে দিচ্ছে। টাইমস স্কোয়্যার, শিকাগোর কেন্দ্রস্থল, লস অ্যাঞ্জেলসের প্রধান সড়ক—সব জায়গাতেই দেখা গিয়েছে উপচে পড়া জনসমুদ্র। হাতে প্ল্যাকার্ড, তাতে লেখা—“Democracy Not Monarchy” ও “The Constitution Is Not Optional”। অনেকে ট্রাম্পের কুশপুতুল পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন প্রাণ বাঁচল ২৫,০০০ আমেরিকানের! ট্রাম্প সেনার অভিযানে ধ্বংস হল মাদক বোঝাই সাবমেরিন
অন্যদিকে, ট্রাম্প (Donald Trump) নিজেকে ‘রাজা’ বলা নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলেন, “ওরা আমাকে রাজা বলছে, আমি রাজা নই।” কিন্তু সেই মন্তব্যের পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি এমন একটি এআই ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে তাঁকে রাজমুকুট পরিহিত যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে দেখানো হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ডেমোক্র্যাটরা তাঁর সামনে নতজানু—যা আরও বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
একদিকে যখন প্রতিবাদে উত্তাল গোটা আমেরিকা, অন্যদিকে তখন যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অর্থাৎ ‘রাজা’ ট্রাম্প (Donald Trump) নিজের বিলাসবহুল ফ্লোরিডার Mar-a-Lago হোটেলে ছুটি কাটাচ্ছেন। তাঁর অনুগামীদের দাবি, এই আন্দোলনের নেপথ্যে রয়েছে ডেমোক্র্যাটদের প্ররোচনা এবং চরম বাম সংগঠনগুলির সক্রিয়তা। তবে বিক্ষোভকারীদের মতে, ট্রাম্প গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছেন। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৫০০-রও বেশি মিছিল হয়েছে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। ওয়াশিংটন, বস্টন, আটলান্টা, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলস—প্রতিটি জায়গাতেই বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছেন। রিপাবলিকান শাসিত রাজ্যগুলিতেও দেখা গেছে পিকেটিং ও রাস্তাব্লক। মন্টানায় এক বিক্ষোভকারীর পোস্টারে লেখা ছিল, “ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতাই প্রকৃত দেশপ্রেম।”
আরও পড়ুন: আজই সুবর্ণ সুযোগ! দীপাবলির আগেই কমল সোনা-রুপোর দাম, রবিতে কত হল ২২ ও ২৪ ক্যারাটের দর?
৭০ বছর বয়সি পেগি কোল নিজের জন্মদিনে ট্রাম্পের (Donald Trump) বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বলেন, “ট্রাম্প ধীরে ধীরে আমাদের গণতন্ত্র ভেঙে দিচ্ছে। এখনই কিছু না করলে চোখের সামনে সব শেষ হয়ে যাবে।” অন্যদিকে, সান ফ্রান্সিসকোয় বিক্ষোভকারীরা বড় অক্ষরে লিখেছেন “No King”—একই সুরে তাঁরা বলেন, “এই আমেরিকাকে আর চিনি না।” এক প্রাক্তন CIA কর্মকর্তা জানান, “আমি ২০ বছর দেশের স্বাধীনতার জন্য বিদেশে লড়েছি, কিন্তু এখন দেখি আমাদের নিজের দেশে একনায়কতন্ত্রের ছায়া ঘনাচ্ছে।”
চলতি বছরেই দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হয়েছেন ট্রাম্প (Donald Trump)। কিন্তু এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে তৃতীয় গণবিক্ষোভে ফেটে পড়ল দেশ। এর আগে জুন মাসেও ২১০০ জায়গায় “No King” আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল আমেরিকা। এবার সেই আন্দোলন আরও বিস্তৃত ও তীব্র আকার নিয়েছে, যা মার্কিন গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।