খিদে মেটাতে মাঠে নেমেছে পুলিশ! কৃষ্ণনগরের গ্রামে ‘অপুষ্টি বিরোধী অভিযান’ ঘিরে তোলপাড়

Published on:

Published on:

Police Launch Nutrition Mission in Krishnanagar Villages Amid malnutrition Concerns

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নদিয়ার একাধিক গ্রামে অপুষ্টির (Malnutrition) শিকার বহু বাসিন্দা। বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছে পুলিশ নিজেই। শুধু তাই নয়, অপুষ্টি দূরীকরণেও নেমেছে তারা। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার উদ্যোগে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে একটি ‘পাইলট প্রজেক্ট’। তেহট্ট মহকুমার পাঁচটি থানা এলাকার পাঁচটি গ্রাম বেছে নিয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ। তবে পুলিশের এই ‘অপুষ্টি-তত্ত্বে’ একমত নন জেলা প্রশাসন কিংবা শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা।

পুলিশের ‘মানবিক প্রকল্প’

বিশ্বে প্রতি বছর ৫০ লক্ষেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয় অপুষ্টিজনিত (Malnutrition) কারণেই। সেই বাস্তবতাই নাকি চোখে পড়েছে কৃষ্ণনগরের পুলিশ প্রশাসনের। তাঁদের দাবি, একাধিক গ্রামে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বহু মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছেন। কাউকে যেন খিদের জ্বালায় কষ্ট পেতে না হয়, সেই মানবিক ভাবনা থেকেই উদ্যোগ। এখন স্বাস্থ্যশিবিরের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হচ্ছে বাসিন্দাদের, এবং বিনামূল্যে সুষম খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ।

অপুষ্টি (Malnutrition) রোধে পাঁচ গ্রামে ‘পাইলট প্রজেক্ট’

তেহট্ট মহকুমার পলাশিপাড়া থানার রানিনগরের সর্দারপাড়া, করিমপুর থানার গোয়াস মালপাড়া, পিপুলখোলা, মুরুটিয়া থানার চকমারোয়া ও হোগোলবেড়িয়া থানার জামশেরপুর-সর্দারপাড়ায় চলছে প্রকল্প। প্রায় ১৫০ জন ‘অপুষ্টিতে আক্রান্ত’ গ্রামবাসীকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, সদ্যোজাত শিশু ও বয়স্কদের ওপর থাকবে বিশেষ নজর। ‘সুস্বাস্থ্য কার্ড’-এর মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট পুষ্টিকর খাবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের দায়িত্বও নেবে পুলিশ। এমনকি প্রতিটি গ্রামে এক জন দুঃস্থ ব্যক্তির ভরণপোষণের দায়িত্ব নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট থানাগুলি।

যদিও পুলিশের ‘অপুষ্টি তত্ত্ব’-এ ভরসা রাখছেন না প্রশাসন ও শাসক দল। করিমপুরের তৃণমূল বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রতিটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে। এ রাজ্যে অনাহার নেই।” রহমতপুর পঞ্চায়েত প্রধান শম্পা বিশ্বাসের মন্তব্য, “আমরা নিয়মিত সহায়তা দিই। কেউ না খেয়ে নেই।” নদিয়ার জেলাশাসক অনীশ দাশগুপ্ত বলেন, “সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। অনাহার বা অপুষ্টির খবর পাইনি। পুলিশ কী করছে, সেটা ওরাই বলতে পারবে।”

তবে ওই পাঁচ গ্রামের বহু বাসিন্দাই বলছেন, সরকারী সুবিধা থাকলেও তা তাঁদের জীবনে যথেষ্ট নয়। জামশেরপুরের নারায়ণ সর্দারের বক্তব্য, “মাসে ১০০০ টাকায় কী হয়? ওষুধ খাব না দু’মুঠো ভাত খাব?” অন্যদিকে গোয়াস মালপাড়ার লক্ষ্মীরানি বলেন, “অনেকেই অনেক কথা বলে। এখন পুলিশ বলছে, দেখি কত দিন চলে।”

Police Launch Nutrition Mission in Krishnanagar Villages Amid malnutrition Concerns

আরও পড়ুনঃ ভোটের মুখে ফের ভরসা কেষ্টতেই! অনুব্রতর গড়া কমিটিতেই শিলমোহর রাজ্যের

কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলেন, “গ্রামের অনেকে কর্মক্ষম নন। তাঁরা অপুষ্টি (Malnutrition) ও অনাহারে রয়েছেন। তাঁদের জন্য থানার তরফে কার্ড তৈরি হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে খাবার, সবটাই দিচ্ছে পুলিশ। বিশেষ করে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে যেখানে মানুষ থানার কাছেও আসেন না, সেই গ্রামগুলিতেই প্রাধান্য দিচ্ছি।” প্রশাসনের নীরবতা আর পুলিশের মানবিক ভূমিকা নিয়ে এখন তোলপাড় নদিয়ার রাজনীতি। প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের সরকারি প্রকল্পগুলি যদি যথাযথ হয়, তবে পুলিশ কেন ‘অপুষ্টি মুক্তি মিশন’-এর দায়িত্ব নিচ্ছে?