বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কালী পুজো (Kali Puja 2025) মানেই এখন বারাসাত। দীপান্বিতা অমাবস্যা এলেই আলোর রোশনাই, থিমের চমক আর ভক্তির ঢেউয়ে ভাসে উত্তর ২৪ পরগনার এই শহর। কিন্তু এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল একেবারেই অন্য প্রেক্ষাপটে। সেই ইতিহাস জানাতেই আজকের এই প্রতিবেদন। আসুন জেনে নিন কিভাবে বারাসাতে শুরু হয়েছিল কালীপুজো।
উদ্বাস্তুদের হাত ধরে শুরু হয় পুজো (Kali Puja 2025)
জানা যায় দেশভাগের পর দুই পরগনার সীমান্তে এসে আশ্রয় নেন বহু ছিন্নমূল মানুষ। সেই সময় তাদেরই হাত ধরে সূচনা হয় বারাসতের কালীপুজোর (Kali Puja 2025)। শুরুটা ছিল ছোট করে। অর্থাৎ ছোট আয়োজন, সীমিত আলো, কিন্তু অপরিসীম ভক্তি। এরপর পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে মহাদেব সেন নিজের উদ্যোগে বৃহৎ পরিসরে কালীপুজোর আয়োজন করেন। তাঁর পুজোর নাম ছিল ‘শক্তির আরাধনায় রেজিমেন্ট’। ক্রীড়াপ্রেমী এই মানুষটির উদ্যোগেই বারাসতের কালীপুজো নতুন দিশা পায়।
ষাট ও সত্তরের দশকে পুজোর চেহারা বদলে যায়। বারাসতের বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন প্রতিযোগিতামূলকভাবে কালীপুজো (Kali Puja 2025) আয়োজন করতে শুরু করে। একদিকে থিমের নতুনত্ব, অন্যদিকে আলোকসজ্জা ও প্রতিমা নির্মাণে শৈল্পিক নিপুণতা। সেই থেকেই বারাসত পরিচিত হতে শুরু করে ‘থিম পুজোর শহর’ হিসেবে। নবজাগরণের এই সময়েই পুজো শুধু ধর্মীয় নয়, হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক মিলনক্ষেত্র। স্থানীয় মানুষ থেকে ব্যবসায়ী, সবাই জড়িয়ে পড়েন উৎসবে।
নব্বইয়ের দশকে কলকাতার থিম পুজোকে টক্কর দিতে শুরু করে বারাসত। নতুন পল্লি, রেলওয়ে কলোনি, ডি.ডি. পার্ক, রামকৃষ্ণপল্লি, এইসব ক্লাবের নাম ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যজুড়ে। শিল্পীরা আসতে থাকেন কলকাতা ও হুগলি থেকে, আলোকসজ্জায় যুক্ত হয় আধুনিক প্রযুক্তি। তখন থেকেই বারাসতের কালীপুজো (Kali Puja 2025) হয়ে ওঠে রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিমা নির্মাণ, প্যান্ডেল ডিজাইন, থিম ভাবনা। সব ক্ষেত্রেই আসতে থাকে মৌলিকতা। পুজোর সময় শহরের রাস্তায় দর্শনার্থীর ঢল নামে, দোকানপাট ও হোটেল ব্যবসাতেও আসে চাঙ্গা ভাব।
বর্তমানে বারাসতে প্রায় ২০টিরও বেশি বড় কালীপুজো (Kali Puja 2025) হয়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন মণ্ডপ দর্শনে। প্রথমদিকে যেখানে এক-দুটি প্যান্ডেলেই সীমাবদ্ধ ছিল উৎসব, এখন পুরো শহর জুড়ে আলোর সমুদ্র। স্থানীয় ক্লাব, সাংস্কৃতিক সংস্থা ও পুজো কমিটিগুলো সারা বছর ধরে পরিকল্পনা করে থিম, বাজেট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা। ফলে, আজ বারাসতের কালীপুজো কেবল উত্তর ২৪ পরগনা নয়, গোটা রাজ্যেরই অন্যতম প্রধান উৎসব হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুনঃ লুচি-পোলাওয়ের খাস সঙ্গী, কালী পুজোয় বানাতে পারেন পনিরের এই ডালনা, রইল প্রণালী
এই সময় বারাসাতে দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রতি বছর লাখ ছাড়ায়। কালীপুজোর(Kali Puja 2025) সময় শহরের অর্থনীতিতেও আসে গতি।হোটেল, দোকান, ট্রান্সপোর্ট, সাজসজ্জা সবখানেই জমে ওঠে ব্যবসা। এক কথায়, বারাসতের কালীপুজো এখন শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এক বিশাল সামাজিক-সাংস্কৃতিক মহোৎসব।