বাংলাহান্ট ডেস্ক: বেজিংয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) মূর্তি স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভারত-চিন সাংস্কৃতিক বন্ধনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। শনিবার বেজিংয়ে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে উন্মোচিত হয় বিশ্বকবির আবক্ষ মূর্তি। মূর্তিটির স্রষ্টা চিনের প্রখ্যাত ভাস্কর ইউয়ান শিকুন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের কূটনীতিক, চিনা সাহিত্যিক, শিল্পী এবং রবীন্দ্রপ্রেমীরা।
চিনে ভারতীয় দূতাবাসে বসল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) মূর্তি
বিশেষ এই অনুষ্ঠানে চিনে ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রদীপ রাওয়াত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) মূর্তির উন্মোচন করেন। দূতাবাস প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছিল এক আলোচনা সভা — যার নাম দেওয়া হয় ‘সঙ্গমম’। এই অনুষ্ঠানে ভারত-চিন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, রবীন্দ্রনাথের চিন সফর এবং দুই দেশের ঐতিহাসিক মৈত্রীর কথা তুলে ধরা হয়।
রাষ্ট্রদূত রাওয়াত তাঁর বক্তব্যে বলেন, “এক শতাব্দী আগে কবিগুরুর চিন সফর দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে এক মাইলফলক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) মানবিকতার বাণী আজও ভারত ও চিনকে অনুপ্রেরণা জোগায়। তাঁর ভাবনা ছিল সীমাহীন — যা জাতি, ভাষা ও সংস্কৃতির সীমানা পেরিয়ে মানবতার এক সেতুবন্ধন রচনা করেছে।” তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে চিনা কবি শু ঝিমো ও সমাজকর্মী লিয়াং কিচাওয়ের বন্ধুত্ব ছিল দুই দেশের মৈত্রীর এক প্রতীক, যা আজও প্রাসঙ্গিক।
উল্লেখযোগ্য, কবিগুরু মোট তিনবার চিন সফর করেছিলেন — ১৯২৪, ১৯২৮ ও ১৯২৯ সালে। তাঁর সফরকালে তিনি চিনা দার্শনিক ও কবিদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন এবং মানবিকতার দর্শনে দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। চিনে আজও রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও দর্শনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। ২০০৯ সালে চিনে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল যেখানে আধুনিক চিনের উন্নয়নে অবদান রাখা ৫০ জন বিদেশির তালিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) ও ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নাম স্থান পেয়েছিল। চিনা পাঠকমহলে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও উপন্যাসের অনুবাদ এখনও সমানভাবে জনপ্রিয়।

আরও পড়ুন: অপেক্ষায় হাজার হাজার চাকরিহারা! SSC-র শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলপ্রকাশ কবে? বড় আপডেট দিলেন চেয়ারম্যান
অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore) নিজেও চিনকে ভারতের ‘নিকটতম আত্মীয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তাঁর মতে, দুই দেশের সভ্যতা ও দর্শনের মূলে রয়েছে একই মানবিক মূল্যবোধ, জ্ঞানচর্চা ও আধ্যাত্মিক ভাবনা। সেই ভাবনারই বাস্তব রূপ দেন তিনি শান্তিনিকেতনে ‘চিনা ভবন’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, যা আজও ভারত-চিন সাংস্কৃতিক বিনিময়ের এক প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
বেজিংয়ে এই নতুন মূর্তি স্থাপন শুধু একটি সাংস্কৃতিক সম্মান নয়, বরং রবীন্দ্রনাথের (Rabindranath Tagore) দর্শন ও ভারত-চিন বন্ধুত্বের এক জীবন্ত প্রতীক। দূতাবাস সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবিষ্যতে এখানে কবিগুরুর সাহিত্য, চিন সফর এবং ভারত-চিন সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে।













