বাংলা হান্ট ডেস্কঃ মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (SIR) কাজ শুরু হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় এই সংশোধন চালু হবে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠকে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানিয়েছেন, “এসআইআরের মূল উদ্দেশ্য হল প্রত্যেক যোগ্য নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং অযোগ্যদের নাম বাদ দেওয়া।”
আটবার হয়েছে এসআইআর (SIR), শেষবার ২০০২ সালে
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫১ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে মোট আটবার হয়েছে এসআইআর (SIR)। সর্বশেষবার এই বিশেষ সমীক্ষা করা হয়েছিল ২০০২-০৪ সালে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের দাবি, সম্প্রতি বিহারে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে এসআইআর সম্পন্ন হয়েছে। এবার সেই মডেলেই চলবে দেশের দ্বিতীয় দফার এসআইআর। এই প্রক্রিয়ায় ভোটারদের বাড়িতে তিনবার যাবেন BLO (বুথ লেভেল অফিসার)।
দ্বিতীয় দফায় কোথায় কোথায় হচ্ছে এসআইআর?
নির্বাচন কমিশনের তালিকা অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফায় যেসব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই সমীক্ষা শুরু হচ্ছে, সেগুলি হল- আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাট, কেরল, লাক্ষাদ্বীপ, মধ্যপ্রদেশ, পুদুচেরি, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ। তবে আগামী বছর শুরুর দিকে যে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা, তার মধ্যে অসমে এখনই এসআইআর (SIR) হবে না। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, “অসমে এনআরসি প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। পরে সেখানে করা হবে এসআইআর।”
কীভাবে হবে এসআইআর প্রক্রিয়া?
১. ভোটারদের হাতে দেওয়া হবে ‘এনুমারেশন ফর্ম’। ইচ্ছা করলে অনলাইনেও ফর্ম পূরণ করা যাবে।
২. পশ্চিমবঙ্গে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম বা তাঁদের বাবা-মায়ের নাম ছিল, সেই তালিকাকেই প্রামাণ্য হিসেবে ধরা হবে।
৩. নাম থাকা ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট নথি দেখাতে হবে। বিএলও-র কাছে ফর্ম জমা দেওয়ার সময় নথি না থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা জমা দেওয়া যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলো হল –
- ২৮ অক্টোবর-৩ নভেম্বর: ফর্ম ছাপা ও ট্রেনিং পর্ব।
- ৪ নভেম্বর-৪ ডিসেম্বর: বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ফর্ম দেওয়া ও সংগ্রহ।
- ৯ ডিসেম্বর: খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ।
- ৯ ডিসেম্বর-৮ জানুয়ারি (২০২৬): ক্লেম ও অবজেকশন জমা দেওয়ার সময়।
- ৯ ডিসেম্বর-৩১ জানুয়ারি (২০২৬): শুনানি ও যাচাইয়ের সময়সীমা।
- ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬: প্রকাশ পাবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।
এসআইআরের জন্য যে নথিগুলি লাগবে সেগুলি হল –
নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আধার কার্ডের পাশাপাশি নিচের যে কোনও একটি নথি দিতে হবে।
১. মাধ্যমিক বা তার বেশি কোনও শিক্ষাগত সার্টিফিকেট,
২. বাড়ি বা জমির দলিল,
৩. পাসপোর্ট,
৪. ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে পাওয়া ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস বা এলআইসি-র নথি,
৫. জাতিগত শংসাপত্র,
৬. স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া পারিবারিক রেজিস্ট্রার,
৭. কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারি কর্মীর পরিচয়পত্র,
৮. ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট,
৯. রাজ্য সরকারের প্রদেয় বাসস্থান শংসাপত্র।

আরও পড়ুনঃ ফের শিরোনামে আরজি কর, তরুণ চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য
উল্লেখ্য, রবিবার জানা গিয়েছিল যে রাজ্যে এসআইআর (SIR) নিয়ে সোমবার বড় ঘোষণা করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। তার আগেই রাজ্যে শুরু হয় প্রশাসনিক রদবদল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার একসঙ্গে বদলি করেছে ৬৪ জন অফিসারকে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আইএএস, ডব্লুবিএস, এমনকি ১০ জন জেলাশাসকও। বদলির তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, দার্জিলিঙ ও পুরুলিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলা। প্রশাসনিক এই পদক্ষেপ ঘিরে ইতিমধ্যেই জল্পনা তুঙ্গে।













