বাংলাহান্ট ডেস্ক: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে ভারতীয় বায়ুসেনার (Indian Air Force)। যুদ্ধকালীন বা দীর্ঘ দূরত্বের অভিযানে জ্বালানির জন্য বারবার অবতরণের সমস্যা এড়াতে এবার আরও ছয়টি ‘মিড এয়ার রিফুয়েলিং’ ট্যাঙ্কার বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। ইজরায়েলের সরকারি সংস্থা ইজরায়েল এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রিজ (IAI)-এর সঙ্গে এই বিষয়ে শীঘ্রই চুক্তি সম্পন্ন হতে চলেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রকের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই চুক্তির মোট মূল্য প্রায় ৮,০০০ কোটি টাকা।
ফাইটার জেটের শক্তি বৃদ্ধিতে বড় পদক্ষেপ ভারতীয় বায়ুসেনার (Indian Air Force):
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, চুক্তি সম্পন্ন হলে ইজরায়েলি সংস্থা পুরনো বোয়িং-৭৬৭ বাণিজ্যিক বিমানগুলিকে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ট্যাঙ্কার বিমানে রূপান্তরিত করবে। এরপর সেগুলি হস্তান্তর করা হবে ভারতীয় বায়ুসেনার (Indian Air Force) হাতে। এই বিশেষ বিমানগুলি মাঝ আকাশে যুদ্ধবিমানে জ্বালানি ভরার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা দীর্ঘ অভিযান বা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিমানের সক্ষমতা ও সময়সীমা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:প্রতিটি লেনদেনে থাকবে কড়া নজর! প্রতারণা ঠেকাতে নতুন রক্ষাকবচ নিয়ে আসছে এই দুই ব্যাঙ্ক
প্রতিরক্ষামন্ত্রকের একাধিক বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয় যে, বায়ুসেনার (Indian Air Force) ট্যাঙ্কার বিমানের ঘাটতি পূরণের জন্য নতুন বিমান কেনা জরুরি। এর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেন্ডার ডাকা হয়েছিল, যেখানে অংশ নেয় রাশিয়া, ইউরোপ এবং ইজরায়েলের একাধিক সংস্থা। শর্ত ছিল, ট্যাঙ্কার বিমান তৈরির প্রক্রিয়ায় অন্তত ৩০ শতাংশ দেশীয় সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। সব শর্ত পূরণ করে সর্বশেষে এগিয়ে আসে ইজরায়েল এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রিজ।
বর্তমানে ভারতীয় বায়ুসেনার (Indian Air Force) হাতে রয়েছে মাত্র ৬টি রাশিয়ার তৈরি IL-78 মিড-এয়ার রিফুয়েলিং বিমান, যেগুলি আগ্রায় মোতায়েন রয়েছে। এই বিমানগুলি বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে জ্বালানির সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই এই বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে নতুন ট্যাঙ্কার বিমানের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছিল। গত ১৫ বছরে আরও ছয়টি রিফুয়েলিং বিমান কেনার একাধিক প্রচেষ্টা নেওয়া হলেও নানা প্রশাসনিক ও আর্থিক জটিলতায় সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি।

আরও পড়ুন:আজ থেকে শুরু SIR, আপনার বাড়িতে কবে পৌঁছবে BLO? জানুন তালিকা যাচাইয়ের দিনক্ষণ
বর্তমান পরিস্থিতিতে বায়ুসেনার (Indian Air Force) জ্বালানি সরবরাহের চাপ সামলাতে একটি ট্যাঙ্কার বিমান ভাড়া করে চালানো হচ্ছে। নতুন এই ছয়টি ট্যাঙ্কার বিমান যুক্ত হলে সেই ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধ প্রস্তুতি ও কৌশলগত ক্ষমতা বাড়াবে বহুগুণে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় যুদ্ধবিমানের দীর্ঘমেয়াদি অভিযানে এই ট্যাঙ্কার বিমানগুলি হবে অত্যন্ত কার্যকর।
‘মিড এয়ার রিফুয়েলিং’ প্রক্রিয়া অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও প্রযুক্তিনির্ভর। সাধারণত অস্ত্রবোঝাই যুদ্ধবিমানের আশপাশে ট্যাঙ্কার বিমানটি উড়ে, এবং নির্দিষ্ট দূরত্বে পৌঁছলে যুদ্ধবিমান পাইলট ট্যাঙ্কার বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর ট্যাঙ্কার বিমান থেকে একটি পাইপ বা ‘বুম’ বেরিয়ে এসে যুদ্ধবিমানের জ্বালানি ট্যাঙ্কারের সঙ্গে যুক্ত হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় মাঝ আকাশে জ্বালানি সরবরাহ। এই প্রক্রিয়া যুদ্ধকালীন অবস্থায় বা জরুরি মিশনে যুদ্ধবিমানের কার্যক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতীয় বায়ুসেনার (Indian Air Force) হাতে চলে আসবে এই ছয়টি অত্যাধুনিক ট্যাঙ্কার বিমান, যা দেশের প্রতিরক্ষা কাঠামোকে আরও এক ধাপ শক্তিশালী করে তুলবে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের।













