বাংলা হান্ট ডেস্কঃ জমি সংক্রান্ত এক মামলায় নাম জড়িয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অমৃতা সিনহার (Justice Amrita Sinha) স্বামী প্রতাপচন্দ্র দের। পেশায় প্রতাপ আইনজীবী। অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ তাকে কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। সেই মামলার সূত্রেই বিধাননগর আদালতে গলার স্বর মেলানোর জন্য প্রতাপবাবুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। আইনজীবি প্রতাপচন্দ্র দে-র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করার অনুমতি পেল না সিআইডি (CID)।
বিচারপতি সিনহার স্বামীর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সিআইডি। তবে শুক্রবার রাজ্য পুলিশের তদন্তকারীদের আবেদন খারিজ করে দিল আদালত। এর আগে বিধাননগর আদালতে প্রতাপ চন্দ্র দে-র আইনজীবী জানান, তার মক্কেলের নাম এফআইআরে নেই। তিনি এই মামলায় একজন সাক্ষী। এই মামলায় তার কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা কী?
প্রতাপ চন্দ্র দে-র পক্ষের আইনজীবীর আরও যুক্তি ছিল, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদের ওই মামলায় যারা জড়িত তারা যদি নিজেরা বিষয়টি মিটমাট করে নেয় তাহলে এখানে তার মক্কেলের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের বিষয়টিই নেই। এরপরই সিআইডি-র আবেদনে খারিজ করে দেয় নিম্ন আদালত।
ওদিকে নিম্ন আদালতে ধাক্কা খেয়েও এরপর সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে যায় সিআইডি। শুক্রবার বিচারপতি শুভেন্দু সামন্তের সিঙ্গল বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল। তবে সিআইডির আবেদনে আপাতত সাড়া দেয়নি আদালত। আগামী জুন মাসে মামলার পরবর্তী শুনানি। মামলায় যুক্ত সব পক্ষকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সামন্ত।
একটি পৈতৃক জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ৬৪ বছরের এক বিধবা মহিলার সঙ্গে তার কিছু আত্মীয়ের বিরোধ শুরু হয়। ঝামেলার জেরে তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তার দাদা এবং আত্মীয়রা। সেই ঘটনার প্রমাণও সিসিটিভিতে রয়েছে। এরপরই এই ইস্যুতে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। নিজের দাদা ও তার কিছু আত্মীয়দের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ফৌজদারি মামলা করেছিলেন বিধবা বৃদ্ধা মহিলা। সেই মামলায় বিবাদী পক্ষের হয়ে সওয়াল জবাব করছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামী।
আরও পড়ুন: হতাশ চাকরিপ্রার্থীরা! প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বড় আপডেট দিল SSC
অভিযোগ ওঠে, নিজের প্রভাব খাঁটিয়ে নানাভাবে তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন কলকাতা হাই কোর্টের মহিলা বিচারপতির স্বামী। এমনকি বিচারপতির বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন ওই মহিলা ও তার মেয়ে। এরপরই তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। যাতে আইনজীবী বা তার বিচারপতি স্ত্রীর প্রভাব ছাড়াই দু’টি ফৌজদারি অভিযোগের যাতে সঠিক ভাবে তদন্ত হয়, সেই জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানান তারা।
এদিকে শীর্ষ আদালতে করা আবেদনে জানানো হয়, ওই দুই মামলার প্রাথমিক তদন্তে এক জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ারও হয়েছেন। তবে তার পরও তদন্তে বাধা দেওয়া চেষ্টা করা হয়েছে। আদালতে দেওয়া হলফনামায় জানানো হয়, ওই মামলায় তদন্তে থাকা অফিসারকে ডেকে নাকি এক বার ভর্ৎসনাও করেছেন বিচারপতি। ওই দু’টি দেওয়ানি মামলায় কেন ফৌজদারি মামলার তদন্ত হচ্ছে? এই প্রশ্নও তোলা হয়।
গত বছর নভেম্বর মাসে সমস্ত বিষয় শুনে এই ফৌজদারি মামলার তদন্তভার সিআইডির হাতেই রাখে সুপ্রিম কোর্ট৷ সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারকেও মুখবন্ধ খামে এই তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়ার দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি এসভিএন ভাট্টির বেঞ্চ৷
সেই সময় সিআইডিকে ভয় না পেয়ে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। পরে অবশ্য এই মামলায় কোনও বাড়তি পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। এদিকে গত ডিসেম্বর মাসে আদালত জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ। তারপরই বিচারপতির স্বামীকে একাধিকবার তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি।