বাংলাহান্ট ডেস্ক: গাজিয়াবাদের অসীম রাওয়াতের সাফল্যের গল্প (Success Story) ভারতের ঐতিহ্যবাহী উদ্যোগ ও আত্মবিশ্বাসের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। দীর্ঘ ১৪ বছর সফল সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার পরও অসীমের মনে ছিল এক ধরনের অপূর্ণতা। একদিন টিভির এক বিতর্ক অনুষ্ঠান তাঁকে নতুন দিশা দেখায়। অনুষ্ঠানটির বিষয় ছিল দেশি গরুর সম্ভাবনা ও গুরুত্ব। সেখান থেকেই অসীমের মনে দৃঢ় সংকল্প জন্মায়—ভারতীয় প্রজাতির গরু দিয়েও লাভজনক ও আধুনিক দুগ্ধ ব্যবসা সম্ভব, এবং তিনি তা প্রমাণ করবেন। আইটি জগতের চাকচিক্য আর পরিবারের সংশয়কে উপেক্ষা করে তিনি বেছে নেন সম্পূর্ণ নতুন পথ। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘হেতা অর্গানিক’, যা আজ গ্রামীণ অর্থনীতি, স্বদেশি উদ্ভাবন ও কৃষি ভিত্তিক শিল্পের সাফল্যের প্রতীক।
অসীমের অসাধারণ সফলতার কাহিনি (Success Story)
‘স্টার্টআপ ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ ঘোষণার ঠিক আগে ডিসেম্বর ২০১৫-তেই তিনি শুরু করেন তাঁর উদ্যোগ। লক্ষ্য ছিল দেশি গরুর সুরক্ষা, বিশুদ্ধ ও ঔষধিগুণসম্পন্ন দুগ্ধজাত পণ্য তৈরি এবং ভারতীয় কৃষি সংস্কৃতিকে আধুনিক ব্যবসার মডেলে রূপান্তর করা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে অসীম দেশজুড়ে ভ্রমণ করেন সফল মডেল খুঁজতে। কিন্তু কোথাও দেশি গরু ভিত্তিক সফল বাণিজ্যিক উদাহরণ পাননি। অধিকাংশ ডেইরি তখন নির্ভর করত বিদেশি বা হাইব্রিড গরুর ওপর। হতাশ না হয়ে তিনি ঝুঁকি নেন। প্রথমে দুটি দেশি গরু কিনে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেন দুগ্ধ উৎপাদন। ধীরে ধীরে ভিত্তি মজবুত করেন। বর্তমানে তাঁর সংস্থা মূলত চার রকমের দেশীয়—গির, থারপারকার, সাহিওয়াল ও বদ্রি—গরু নিয়ে কাজ করছেন। উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে পাঁচটি ফার্মে এসব গরু লালন-পালন করা হয় (Success Story)।
তবে তাঁর সাফল্যের (Success Story) পথ মোটেও সহজ ছিল। চাকরি ছাড়ার পর আর্থিক চাপ, দক্ষ কর্মী খুঁজে পাওয়া এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা—এসবই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে কঠিন ছিল গ্রাহকদের বোঝানো যে দেশি গরুর দুধ ও ঘি অন্যদের চেয়ে দামি হয় কারণ এগুলোর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা বেশি। ধৈর্য ও অধ্যবসায়ে অসিম সব বাধা অতিক্রম করেন। আজ হেতা অর্গানিক তৈরি করে ১৩০টিরও বেশি প্রাকৃতিক দুগ্ধজাত পণ্য—দুধ, ঘি, দইসহ নানা স্বাস্থ্যপণ্য। এগুলো বিক্রি হয় নিজস্ব ওয়েবসাইটের পাশাপাশি অ্যামাজন ও ফ্লিপকার্টে, ফলে কোম্পানি জাতীয় পরিচিতি অর্জন করেছে।
বর্তমানে হেতা অর্গানিকের বার্ষিক টার্নওভার ১০ কোটিরও বেশি। সংস্থায় নিয়োজিত রয়েছেন ১১০ জনের বেশি কর্মী। শুধু আর্থিক সাফল্য নয়, এটি গ্রামীণ কর্মসংস্থান তৈরি এবং কৃষি-ভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। দেশি গরুর সংরক্ষণ ও দুগ্ধ শিল্পে উদ্ভাবনের জন্য অসীম রাওয়াত জাতীয় ‘গোপাল রত্ন’ পুরস্কারসহ একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি দেশি গরুর সংখ্যা আরও বাড়াতে এবং নতুন নতুন দেশি জাত নিয়ে কাজ করার লক্ষ্য রেখেছেন (Success Story)।

আরও পড়ুন:একরাতেই পাবেন নরম মোলায়েম ঠোঁট, জেনে নিন ঘরোয়া সমাধান
অসীম রাওয়াত তাঁর উদ্যোগের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন—ভারতের নিজস্ব শক্তি, ঐতিহ্য আর কৃষিনির্ভর জীবনধারা নিয়ে আধুনিক ব্যবসায়ও অসামান্য সাফল্য (Success Story) সম্ভব। তাঁর গল্প নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখতে এবং সাহস নিয়ে তা বাস্তবায়নের প্রেরণা যোগায়।













