ধনীরা আরও ধনী! আদানি-অম্বানিদের সম্পত্তি আরও বাড়ল, অতি-ধনী শ্রেণির সম্পত্তির হার নিয়ে রিপোর্ট দিল G20 গোষ্ঠী

Published on:

Published on:

বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতের (India) অতি-ধনী শ্রেণির সম্পত্তি বৃদ্ধির হার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে জি২০ গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীটির ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি কমিটি অফ ইনডিপেনডেন্ট এক্সপার্টস অন গ্লোবাল ইনইকুয়ালিটি’-র প্রকাশিত এই রিপোর্ট অনুযায়ী, গত প্রায় আড়াই দশকে দেশের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষের সম্পত্তি বেড়েছে দেড় গুণেরও বেশি। হিসেব অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাঁদের হাতে সম্পদের বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬২ শতাংশে। অর্থাৎ, দেশে ধনবৈষম্যের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে রিপোর্ট।

ভারতের (India) অতি-ধনী সম্প্রদায়ের সম্পত্তির হার জানাল জি-২০ গোষ্ঠী

জি২০ গোষ্ঠীর এই বিশেষজ্ঞ কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগ্লিট্‌জ়। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন ভারতীয় (India) অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ, আন্তর্জাতিক সমাজকর্মী উইনি ব্যানয়িমা এবং অর্থনীতিবিদ ইমরান ভালোদিয়া-সহ আরও অনেকে। তাঁদের যৌথ মূল্যায়নে উঠে এসেছে বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামোর গভীর অসাম্যের চিত্র। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে ২০০০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যত নতুন সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে, তার ৪১ শতাংশই দখলে রয়েছে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষের। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই বৈষম্য এখন ‘জরুরি’ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জলবায়ু সংক্রান্ত ভবিষ্যৎকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন:এ কোন বাংলাদেশ! গান শরীরচর্চা সবই ‘ইসলামবিরোধী’, নিদান দিয়ে বন্ধ শিক্ষক নিয়োগ

ভারতের (India) পাশাপাশি চিনেও ধনী শ্রেণির সম্পত্তি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, একই সময়ে চিনের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৫৪ শতাংশ। তবে রিপোর্টে স্পষ্ট করা হয়েছে, ভারত ও চিনের মতো বড় জনসংখ্যার দেশে মাথাপিছু আয়ের উন্নতি ঘটেছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বৈষম্যের সূচকে কিছুটা ভারসাম্য দেখা গেলেও দেশগুলির অভ্যন্তরীণ বৈষম্যই প্রকৃত উদ্বেগের কারণ। বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে, ধনবৈষম্য কেবল অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি রাজনৈতিক ও নৈতিক সংকটও বটে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, যে দেশগুলিতে ধনবৈষম্য বেশি, সেখানে গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হওয়ার আশঙ্কাও তুলনামূলক বেশি। ভোটারদের ক্ষমতা কমে যায় এবং আর্থিক নীতিনির্ধারণে জনসাধারণের থেকে ধনী কর্পোরেট গোষ্ঠীর প্রভাব বাড়ে বলে দাবি করা হয়েছে।

এছাড়া, রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালের পর ভারত (India) সহ বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণের গতি মারাত্মক ভাবে মন্থর হয়েছে। কোভিড-পরবর্তী সময় এবং বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এই প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিয়েছে। কিছু অঞ্চলে দারিদ্র্য বাড়তেও শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী সম্পদের যে অংশ দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের হাতে যাওয়ার কথা ছিল, তা ক্রমশ সীমিত হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

 G-20 reveals wealth of super rich in India.

আরও পড়ুন:বিলাসপুরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা, মালগাড়িতে ধাক্কা লেগে দুমড়ে মুচড়ে গেল যাত্রীবাহী ট্রেন, মৃত অন্তত ৯

স্টিগ্লিট্‌জ় ও তাঁর সহ-অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, সম্পদের এই চরম অসাম্য কোনও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ফল নয়, বরং নীতি-নির্ভর ফলাফল। তাঁদের মতে, সঠিক করনীতি, সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ, এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হলে এই বৈষম্য কমানো সম্ভব। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে আর্থিক সমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব—রিপোর্টে এমনই মত বিশেষজ্ঞ কমিটির (India)।

এই রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারতে (India) বিরোধীরা বিষয়টি তুলে ধরে দাবি করেছে, দেশের প্রবৃদ্ধির লাভ সাম্যভাগে হয়নি, উপকৃত হয়েছেন মুষ্টিমেয় কারবারি ও ধনী শ্রেণি। অন্য দিকে সরকার দাবি করেছে, অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং সামাজিক সাহায্য প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের পথে দেশ এগোচ্ছে। তবে জি২০’র এই রিপোর্ট স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে—ভারতের সামনে ধনবৈষম্য রোধ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।