ব্যর্থতা ছিল সঙ্গী, তবু থামেননি ভারত — ঘরের ভাড়া কম্পিউটারের সাহায্যেই গড়লেন কোটি টাকার ব্যবসা

Published on:

Published on:

বাংলাহান্ট ডেস্ক: বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা ভরত বায়লাপ্পা আজ সাফল্যের (Success Story) প্রতীক, কিন্তু তাঁর এই যাত্রাপথ মোটেও সহজ ছিল না। একাধিক ব্যর্থতা, আর্থিক সংকট ও অপমানের মধ্য দিয়েও নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের জোরে তিনি গড়ে তুলেছেন এক আন্তর্জাতিক রিক্রুটমেন্ট ও প্রযুক্তি সংস্থা। আজ তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘সেটিউভ স্টাফিং সলিউশনস’ এবং ‘ট্রেনওয়ে২১ টেকনোলজিস’–এর বার্ষিক আয় প্রায় ১২ কোটি টাকা।

ভরত বায়লাপ্পার অসাধারণ সাফল্যের কাহিনি (Success Story)

বেঙ্গালুরুর এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ভরত বায়লাপ্পার। পড়াশোনায় তেমন ভালো না হলেও তিনি ছোটবেলা থেকেই বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছা পূরণ হয়নি, কলেজের শেষ পরীক্ষায়ও বসতে পারেননি অনুপস্থিতির কারণে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে শুরু করেন তাঁর উদ্যোক্তা-জীবন। মোহন সিং ওবেরয়ের জীবনগাথা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন। নিজেই ঘরে ঘরে সিলিন্ডার পৌঁছে দিতেন। প্রথমবারের মতো সাফল্যের (Success Story) স্বাদ পেলেও সেই ব্যবসা বেশিদিন টেকেনি।

আরও পড়ুন: SIR আবহে হারিয়ে গিয়েছে আধার-ভোটার কার্ড? আতঙ্কিত না হয়ে জানুন কী করবেন

এরপর ১০,০০০ টাকায় তিনি ‘বিনায়ক ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে একটি মার্বেল সিঙ্ক তৈরির কারখানা খোলেন, পরে ‘কেবি ডিজাইনস’ নামে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সংস্থা এবং একটি শার্ট তৈরির ইউনিটও চালু করেন। কিন্তু অর্থাভাব, গ্রাহকের টাকা না পাওয়া এবং পুঁজি ঘাটতির কারণে একে একে সব ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যায়। তবে হাল না ছেড়ে ভরত ফের নতুন চ্যালেঞ্জ নেন। এক এডুটেক ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবসায় ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেন। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে তিনি কেন্দ্রটিকে সফল করে তোলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তাঁকে সেখান থেকে অপমানিত করে বের করে দেওয়া হয়। এক সময় মনে হয়েছিল তাঁর উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন এখানেই শেষ (Success Story)।

কিন্তু ভাগ্য থামাতে পারেনি ভরতকে। ২০০২ সালে তিনি দিল্লির একটি রিক্রুটমেন্ট ফার্মে কাজ শুরু করেন। অভিজ্ঞতা না থাকলেও নিজের দক্ষতা ও গবেষণার মাধ্যমে দ্রুত প্রতিষ্ঠানের অন্যতম সেরা কর্মী হয়ে ওঠেন। এই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০৭ সালে আবারও উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস পান। বাড়ি থেকেই শুরু করেন ‘সেটিউভ স্টাফিং সলিউশনস’। প্রথমে মাসে ১,০০০ টাকায় একটি কম্পিউটার ভাড়া নিয়ে শুরু করেন তিনি। প্রথম চেক পান ২,৯১,৫৬৪ টাকার—সেই টাকাতেই শুরু হয় তাঁর সাফল্যের গল্প(Success Story)।

Bharat Baylappa's Success Story will amaze you.

আরও পড়ুন:“পাগলামো”, রাহুলের অভিযোগের পর এবার মুখ খুললেন ব্রাজিলিয়ান মডেল, স্পষ্ট জানালেন…

২০১২ সালে সংস্থার নাম বদলে হয় ‘ভারত হেডহান্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড’। ২০১৫ সালে স্ত্রী কলাবতীর সঙ্গে মিলে চালু করেন ‘ট্রেনওয়ে২১ টেকনোলজিস লিমিটেড’। কোনো সেলস টিম ছাড়াই মুখের কথায় প্রচারের মাধ্যমে ইনফোসিস, উইপ্রো, ওরাকল-এর মতো সংস্থার সঙ্গে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় (Success Story)।

তবে ঠিক সেই সময়ই শুরু হয় করোনা মহামারির ধাক্কা। ব্যবসা অনেকটাই থমকে যায়। কিন্তু হতাশ না হয়ে ভরত ফিরে যান তাঁর শৈশবের ভালোবাসা—চাষবাসে। বেঙ্গালুরুর কাছাকাছি দুই একর জমিতে শুরু করেন অর্গানিক অ্যাভোকাডো চাষ। কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুরু করলেও পরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের ডিপ্লোমা সম্পূর্ণ করেন। আজ তাঁর ৮০টি অ্যাভোকাডো গাছ রয়েছে, বিক্রি হয় ১৮০-২২০ টাকা কেজি দরে। বছরে আয় প্রায় ২ লক্ষ টাকা। একইসঙ্গে তাঁর আগের ব্যবসাগুলিও ফিরে পেয়েছে সাফল্যের গতি (Success Story)।