বাংলাহান্ট ডেস্ক: এবার ভারতীয় নৌসেনায় যুক্ত হলো INS Ikshak (INS Ikshak)। পৃথিবীর তিনভাগ জল আর একভাগ স্থল—এই প্রাথমিক ভূগোলের তথ্যের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে অসংখ্য রহস্য। মাটির উপরের পৃথিবী যতটা চেনা, তার চেয়ে বহু গুণ জটিল এবং অজানা সমুদ্রের নীচের জগৎ। গভীর জলের তলায় রয়েছে বিশাল গিরিশৃঙ্গ, গহ্বর, উপত্যকা এবং অজস্র ভৌগোলিক বৈচিত্র। সেই অজানাকে জানার জন্য এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সমুদ্রতলের মানচিত্র তৈরি করা এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। বিশেষত যখন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে রয়েছে চিন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ—তখন এই কাজ আরও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হল INS Ikshak (INS Ikshak):
এই প্রেক্ষাপটেই গত ৬ নভেম্বর ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হল এক নতুন শক্তি—INS Ikshak (INS Ikshak)। এটি লার্জ সার্ভে ভেসেল শ্রেণির তৃতীয় জাহাজ। ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এই যুদ্ধজাহাজে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ দেশীয় উপকরণ, যা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের এক বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। INS Ikshak-এ সংযোজিত হয়েছে আধুনিক হাইড্রোগ্রাফিক সরঞ্জাম, যার মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশের ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরি করা সম্ভব হবে। এই জাহাজে রয়েছে মাল্টিবিম ইকো সাউন্ডার, সাইড স্ক্যান সোনার, সাব-বটম প্রোফাইলার, নির্ভুল ডিজিপিএস এবং অত্যাধুনিক ডেটা প্রসেসিং ইউনিট, যা দ্রুত ও নিখুঁতভাবে সমুদ্রতলের মানচিত্র তৈরি করতে পারবে।
আরও পড়ুন:ইনফোসিসে করতেন চাকরি! সেখান থেকেই শুরু UPSC-র সফর, IAS হয়ে স্বপ্নপূরণ নীতীনের
এই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি থ্রিডি ব্যাথিমেট্রিক মানচিত্র INS Ikshak (INS Ikshak) শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নয়, নৌ-নিরাপত্তা ও সামরিক অভিযানে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে। সমুদ্রের তলদেশের প্রকৃত গঠন জানা গেলে যুদ্ধ বা প্রতিরক্ষার সময় সেই ভৌগোলিক কাঠামোকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। তাছাড়া সাবমেরিন কেবল, অ্যাঙ্কারিং জোন বা বন্দর সংলগ্ন জলপথগুলির সঠিক অবস্থান জানা থাকলে সেগুলি রক্ষার ব্যবস্থাও অনেক সহজ হবে। একই সঙ্গে এই ম্যাপিং প্রযুক্তি ভারতের সামুদ্রিক মাইনিং ক্ষমতাকেও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যা দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
চিন ইতিমধ্যেই নিজেদের এলাকা ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ ধরনের হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ চালাচ্ছে। তারা একে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বললেও, ভারত তা কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেই দেখে। বিশেষ করে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চিনের সক্রিয়তা নিয়ে দিল্লির উদ্বেগ দীর্ঘদিনের। কারণ, যদি চিন এই এলাকায় বিশদ মানচিত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়, তবে তা তাদের সামরিক ও নৌ-কৌশলে একটি বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে। সেই সম্ভাব্য বিপদ মাথায় রেখে ভারতও INS Ikshak (INS Ikshak)-কে যুক্ত করে এখন নিজের সামুদ্রিক অঞ্চলকে আরও ভালোভাবে চেনার ও সুরক্ষিত রাখার পথে এগোচ্ছে।

আরও পড়ুন:“আমাদের অনুপ্রেরণা”, “বন্দে মাতরম”-এর ১৫০ বছর পূর্তিতে বিশেষ স্মারক মুদ্রা ও ডাকটিকিট প্রকাশ মোদীর
INS Ikshak (INS Ikshak)-এর কমিশনিংয়ের মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনী শুধু একটি নতুন জাহাজই পেল না, পেল ভবিষ্যতের সমুদ্র-সুরক্ষার এক শক্তিশালী হাতিয়ার। এই জাহাজ ভারতের আত্মনির্ভর প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রতীক এবং সমুদ্রতলে ভারতের উপস্থিতিকে আরও দৃঢ় করে তুলবে। সমুদ্রের গভীরে থাকা রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি, এটি প্রমাণ করে দিচ্ছে—ভারত এখন নিজের নিরাপত্তা ও গবেষণায় স্বনির্ভর, আত্মবিশ্বাসী এবং কৌশলগতভাবে আরও প্রস্তুত।












