বাংলাহান্ট ডেস্ক: অসমে (Assam) বহুবিবাহ রুখতে বড় পদক্ষেপ নিল হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরকার। সোমবার রাজ্যের মন্ত্রিসভায় পাশ হয়ে গেল বহুবিবাহ প্রতিরোধ বিল। এই বিলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কেউ যদি একাধিক বিয়ে করেন, তবে তাঁর সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। একইসঙ্গে বহুবিবাহের ফলে যেসব মহিলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তাঁদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। রাজনীতিকদের মতে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিল হিমন্ত সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ‘মাস্টারস্ট্রোক’।
অসমে (Assam) নিষিদ্ধ হল বহুবিবাহ:
গত মাসেই মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছিলেন, রাজ্যে একাধিক ঐতিহাসিক বিল আনার পরিকল্পনা রয়েছে— যার মধ্যে ‘লাভ জেহাদ’, বহুবিবাহ এবং বৈষ্ণব সত্রগুলির সুরক্ষা সম্পর্কিত বিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেই পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবেই সোমবার বহুবিবাহ প্রতিরোধ বিল মন্ত্রিসভায় পাশ করানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “অসমে (Assam) বহুবিবাহ সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। অনেক নারী এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তাঁদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় এই আইন প্রয়োজনীয়।”
আরও পড়ুন:“আমরা ভুল করেছি”, নন্দীগ্রাম থেকে বিস্ফোরক বার্তা শুভেন্দুর, ঠিক কী বললেন বিরোধী দলনেতা?
বিল অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি যদি আইনত বিবাহবিচ্ছেদ না করেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ে করেন, তবে তাঁকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে। শুধু তাই নয়, বহুবিবাহে যুক্ত ধর্মীয় নেতা বা সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। হিমন্তের মতে, এই আইন কার্যকর হলে রাজ্যে (Assam) সামাজিক ন্যায় ও নারীর নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।
বিলে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বহুবিবাহের ফলে যেসব নারী মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাঁদের সহায়তার জন্য একটি স্বতন্ত্র তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিল থেকেই তাঁদের পুনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। অসম (Assam) সরকারের দাবি, এই উদ্যোগ নারীদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নের পথে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
তবে নতুন আইন সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে না। তফসিলি জাতি এবং অসমের (Assam) ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত অঞ্চল— যেমন বড়োল্যান্ড, ডিমা হাসাও ও কারবি আংলং— এই আইনের আওতার বাইরে থাকবে। সংবিধান অনুযায়ী এই অঞ্চলগুলির নিজস্ব আইন ও সামাজিক প্রথা বজায় থাকবে বলেই এই ছাড় দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:পার্ক স্ট্রিটে আর হোর্ডিং নয়! কলকাতা পুরসভার সিদ্ধান্তে মামলা হাই কোর্টে
চলতি মাসের ২৫ তারিখে বিলটি বিধানসভায় পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২৬ সালের অসম (Assam) বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিল পাস হলে তা বিজেপি সরকারের পক্ষে বড় সুবিধা বয়ে আনবে। বিশেষজ্ঞদের মত, একদিকে নারীর অধিকার রক্ষায় এটি একটি প্রগতিশীল পদক্ষেপ, অন্যদিকে নির্বাচনী সমীকরণেও এটি হিমন্ত সরকারের জন্য ‘গেমচেঞ্জার’ হতে পারে।
অসমের (Assam) সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই বহুবিবাহ একটি সংবেদনশীল ইস্যু। রাজ্য সরকারের মতে, এই আইন কার্যকর হলে রাজ্যে সামাজিক সংস্কার ও নারী সুরক্ষায় নতুন অধ্যায় সূচিত হবে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন— “অসমে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। যারা একাধিক বিয়ে করে মহিলাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তাঁদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।”












