মুসলিমরা কি RSS-এ যোগ দিতে পারবেন? রাখঢাক না রেখে কী জানালেন মোহন ভাগবত?

Published on:

Published on:

Can Muslims join Rashtriya Swayamsevak Sangh?
Follow

বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতকে ‘হিন্দুরাষ্ট্রে’ পরিণত করার দাবি নিয়ে যখন দেশজুড়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে, ঠিক তখনই মুখ খুললেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (Rashtriya Swayamsevak Sangh) প্রধান মোহন ভাগবত। বেঙ্গালুরুতে সঙ্ঘের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত দু’দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ভাগবত স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন— সঙ্ঘের কোনও রাজনৈতিক দল নেই, কোনও নির্দিষ্ট দলকে সমর্থনও করে না তারা। তাঁর বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে সঙ্ঘের আত্মপরিচয়, সংগঠনের নীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা।

মুসলিমরা সঙ্ঘে (Rashtriya Swayamsevak Sangh) যোগ দিতে পারবেন কিনা জানালেন মোহন ভাগবত:

ভাগবতের বক্তব্য, “সঙ্ঘ (Rashtriya Swayamsevak Sangh) জাতপাত, ধর্ম বা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে বিভাজন ঘটায় না। আমাদের লক্ষ্য জাতীয় ঐক্য।” মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সঙ্ঘে জায়গা পাবেন কি না— এই প্রশ্নে তাঁর উত্তর, “সঙ্ঘে কোনও ব্রাহ্মণের জায়গা নেই, তেমনি মুসলিম, খ্রিস্টান, বা অন্য কোনও জাতেরও নয়। শুধুমাত্র ভারত মাতার সন্তান হিসেবে, হিন্দু সমাজের সদস্য হিসেবে আসতে হবে। মুসলিম, খ্রিস্টানরাও শাখায় আসেন, কিন্তু আমরা তাঁদের ধর্মের পরিচয় জিজ্ঞেস করি না। আমরা সবাই ভারত মাতার সন্তান।”

আরও পড়ুন:অসমে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করতে মন্ত্রিসভায় পাশ হল বিল! একাধিক বিয়ে করলেই ৭ বছরের জেল

সঙ্ঘের (Rashtriya Swayamsevak Sangh) কাজ ও দর্শন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমরা কারও জন্য কিছু করব না, প্রত্যেকে নিজের কর্তব্য পালন করুক। ঈশ্বর তাদেরই সাহায্য করেন, যারা নিজেদের সাহায্য করে। সঙ্ঘে যোগ দিতে হলে প্রত্যাশাহীনভাবে আসতে হবে।”

রাজনীতিতে সঙ্ঘের (Rashtriya Swayamsevak Sangh) ভূমিকা নিয়েও স্পষ্ট মন্তব্য করেন ভাগবত। তাঁর দাবি, “সঙ্ঘ কোনও রাজনৈতিক দলের অংশ নয়, নির্বাচনেও অংশ নেয় না। আমরা সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করি। রাজনীতি বরং বিভাজন ঘটায়। আমরা শুধু নীতি বা আদর্শকে সমর্থন করি, দলকে নয়। উদাহরণস্বরূপ, রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে আমরা ছিলাম। যে দল সেটির জন্য কাজ করেছে, স্বয়ংসেবকরা তাদের ভোট দিয়েছে। যদি কংগ্রেসও সেই দাবিকে সমর্থন করত, স্বয়ংসেবকরা তাদেরও ভোট দিত। সঙ্ঘের নিজস্ব কোনও দল নেই, সব দলই ভারতের দল।”

Can Muslims join Rashtriya Swayamsevak Sangh?

আরও পড়ুন:বর্ষশেষের পার্টিতে বড় ধাক্কা, ডিসেম্বর থেকেই বাংলায় হুড়মুড়িয়ে বাড়ছে মদের দাম

সঙ্ঘ (Rashtriya Swayamsevak Sangh) কেন এখনও পর্যন্ত সংগঠন হিসেবে সরকারি ভাবে নিবন্ধিত হয়নি, সেই প্রশ্নে ভাগবতের জবাব, “১৯২৫ সালে যখন সঙ্ঘের সূচনা হয়, তখন ইংরেজ শাসনের অধীনে নিবন্ধনের কোনও প্রয়োজন ছিল না। স্বাধীনতার পরও বাধ্যতামূলক হয়নি। আমরা তিন বার নিষিদ্ধ হয়েছি, আদালত প্রতিবারই নিষেধাজ্ঞা খারিজ করেছে। অর্থাৎ সরকার আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে, না হলে নিষিদ্ধ করত কীভাবে? আমরা সাংবিধানিক ও বৈধ সংগঠন।” কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সম্প্রতি সঙ্ঘ নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছিলেন। সেই প্রেক্ষিতেই ভাগবতের এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। ভাগবতের কথায়, “যত বিরোধিতা হয়, সঙ্ঘ ততই শক্তিশালী হয়।”

এছাড়া ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়েও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “১৯২৫ সালে সঙ্ঘ (Rashtriya Swayamsevak Sangh) গেরুয়া পতাকাকে গ্রহণ করেছিল। পরে ১৯৩৩ সালে তেরঙ্গাকে জাতীয় পতাকা করা হয়। মহাত্মা গান্ধীর উদ্যোগেই তিনটি রং গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। আমরা গেরুয়া পতাকাকে শ্রদ্ধা করি, পাশাপাশি জাতীয় পতাকাকেও সর্বোচ্চ সম্মান দিই।” ভাগবতের এই মন্তব্যে যেমন সঙ্ঘের আত্মপরিচয়ের ব্যাখ্যা মিলেছে, তেমনই হিন্দুত্বের প্রশ্নে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত ঘটেছে রাজনৈতিক মহলে।