বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গ্রামবাংলার চিরচেনা ছবি রাস্তার ধারে, পুকুরপাড়ে মাথা উঁচু করে থাকা তালগাছ। একসময় এই দৃশ্য ছিল প্রত্যেক গ্রামীণ অঞ্চলের অঙ্গ। কিন্তু শহরায়ন, কৃষিজমির বিস্তার এবং নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ধীরে ধীরে কমে গেছে তালগাছের সংখ্যা। আর তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের (South Bengal) জেলাগুলিতে। বছর বছর বেড়ে চলেছে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবার বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্যের বন দফতর।
দক্ষিণবঙ্গের (South Bengal) চার জেলায় ৭৫ হাজার তাল গাছ লাগানো হবে
আগামী বর্ষায় দক্ষিণবঙ্গের (South Bengal) চার জেলা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানে প্রায় ৭৫ হাজার তালগাছের চারা রোপণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে মোট ৩০০ কিলোমিটার রাস্তার দুই ধারে পর্যায়ক্রমে তালচারা লাগানোর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকার নিশ্চিত করেছেন, এই চার জেলায় বৃহৎ পরিসরে তালরোপণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত।
বনবিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিকভাবেই তালগাছ বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর। প্রায় ১০০ ফুটের বেশি উঁচু তালগাছের শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করে এবং বজ্রপাতের সময় এটি যেন প্রাকৃতিক আর্থিং-এর মতো কাজ করে। ফলে বিদ্যুৎ সরাসরি মাটিতে নেমে যায় এবং আশপাশের মানুষ ও বসতি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ থাকে। তাই বজ্রপাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও জনবসতির আশেপাশে তালগাছ রোপণকে অত্যন্ত জরুরি মনে করছে প্রশাসন।
বন দপ্তর সূত্রে আরও জানা গেছে, বাঁকুড়ার কেন্দ্রীয় চক্র, পুরুলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র, বীরভূম এবং পূর্ব বর্ধমানের দক্ষিণ-পূর্ব চক্রে তালগাছ লাগানোর নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়নের পথে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (অর্থ) এবং এই প্রকল্পের নোডাল অফিসার রাজু দাস তিনটি চক্রের আধিকারিকদের নিয়ে ভার্শুয়াল বৈঠকে বিস্তারিত নির্দেশ জারি করেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গের (South Bengal) কিছু জেলায় বছরে ৬০–৭০ জন পর্যন্ত মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারান। তাল ও খেজুর গাছের দ্রুত কমে যাওয়াই এর অন্যতম বড় কারণ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাঁকুড়ায় ১৫০ কিলোমিটার, পুরুলিয়ায় ১০০ কিলোমিটার এবং বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানে মিলিয়ে আরও ৫০ কিলোমিটার রাস্তায় চার মিটার অন্তর অন্তর তালচারা রোপণ করা হবে। রাস্তার এমন অংশ বেছে নেওয়া হচ্ছে যা বনভূমির অন্তর্গত নয়, ফলে চারাগুলিকে রক্ষা করা ও বড় করে তোলার কাজ সহজ হবে। ইতিমধ্যেই বিপুল পরিমাণ বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরির প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ইডির রাডারে মন্ত্রী সুজিত বোসের পরিবার! প্রথমেই জেরা জামাইকে, ব্যাঙ্ক নথি হাজিরা সিজিও কমপ্লেক্সে
দক্ষিণবঙ্গের (South Bengal) গ্রামীণ প্রাকৃতিক পরিবেশকে ফিরিয়ে আনা এবং বজ্রপাতজনিত মৃত্যুহার কমাতেই এই বৃহৎ উদ্যোগে নেমেছে বন দপ্তর। আগামী বর্ষার আগেই বেশির ভাগ এলাকায় রোপণ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।












