কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে শুরু চাষাবাদ! তাতেই টাকার বৃষ্টি, বার্ষিক ৫০ লক্ষ উপার্জন তামিলনাড়ুর প্রৌঢ়ের

Published on:

Published on:

R Narasimman's Success Story will amaze you.
Follow

বাংলা হান্ট ডেস্ক: তামিলনাড়ুর ত্রিচির বাসিন্দা আর. নরসিম্মনের জীবনে সাফল্যের কাহিনি (Success Story) প্রচলিত কৃষি ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা রাখে। ১৯৯৮ সালে কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে তিনি কৃষিকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেন। শুরুটা ছিল খুব সাধারণ, মূল লক্ষ্য ছিল অবসর–জীবনে শান্তিপূর্ণভাবে চাষ করে দিন কাটানো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর উদ্যোগ ছোটখাটো চাষাবাদকে রূপ দেয় ১৫৮ একরজুড়ে বিস্তৃত এক সম্পূর্ণ অর্গানিক অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি ইকোসিস্টেমে। বর্তমানে এই খামার থেকেই তাঁর বার্ষিক আয় ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে। প্রথমদিকে নরসিম্মন আলফানসো আমের চাষ করে দ্রুত সাফল্য পান, কিন্তু শুধুমাত্র এক ধরণের ফসলের ওপর নির্ভরশীলতা—মোনোকালচারের ঝুঁকি—তাঁকে নতুন চিন্তা ভাবনায় নিয়ে যায়। অনির্দিষ্ট আবহাওয়া, বাজারের ওঠানামা ও ক্ষতির আশঙ্কা তাঁকে একটি আরও স্থিতিশীল কৃষি–মডেল খুঁজতে বাধ্য করে। এর ফলেই জন্ম নেয় তিনস্তরে বিভক্ত তাঁর ‘থ্রি-টিয়ার মডেল’।

আর নরসিম্মনের সাফল্যের কাহিনি (Success Story):

এই মডেলে জমির প্রতিটি স্তরের সর্বোত্তম ব্যবহার হয়। প্রথম স্তরে রাখা হয়েছে সাগওয়ান, লাল চন্দন ও সিলভার ওকের মতো দীর্ঘমেয়াদি বৃক্ষ, যেগুলি ১৫ থেকে ২০ বছরে কোটি টাকার আয় দিতে পারে। দ্বিতীয় স্তরে আম, কলা ও তরমুজের মতো বার্ষিক রিটার্ন দেওয়া ফসল। তৃতীয় স্তরে রয়েছে উড়দ ও মুগের মতো স্বল্পমেয়াদি ডালফসল, যা মৌসুমি আয় নিশ্চিত করে। বর্তমানে খামারে থাকা প্রায় ২৫,০০০ সিলভার ওক ও অন্যান্য বৃক্ষই বছরে অতিরিক্ত ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা আয় এনে দেয় (Success Story)।

আরও পড়ুন:দুবাইয়ে এয়ার শো চলাকালীন ভেঙে পড়ল ভারতীয় বায়ুসেনার তেজস! এখনও খোঁজ মেলেনি পাইলটের

২০০৮ সালে নরসিম্মন সম্পূর্ণভাবে জৈব চাষে মনোনিবেশ করেন। তাঁর খামারের ১৬টি দেশি গাইয়ের গোবর থেকে তৈরি খাদই সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সোলার–চালিত ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা ও ৭০০ বর্গফুটের সোলার ড্রায়ার খামারটিকে পরিবেশবান্ধব করে তুলেছে। ২০১০ সালে তাঁর খামারে উৎপন্ন হয় ৩৫.৭৫ কেজি ওজনের এক বিশাল তরমুজ, যা দেখে নামধারি সিডস কোম্পানিও বিস্মিত হয়েছিল। সেই তরমুজটি বিক্রি হয় ৫,০০০ টাকায়। এই সাফল্য প্রমাণ করে যে মানসম্পন্ন জৈব উৎপাদনেরও স্থানীয় বাজারে বিশেষ মূল্য আছে। এর পর থেকেই নরসিম্মন জাতীয় স্তরে পরিচিত হয়ে ওঠেন; ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার নীতিমালায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রিত হন এবং সেখানে তিনি বেসরকারি মধ্যস্বত্বভোগী সরানোর মতো ২২টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন (Success Story)।

নরসিম্মনের মডেলের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর স্বয়ংসম্পূর্ণতা। বহু দশক ধরে গড়ে ওঠা তাঁর কৃষি–ইকোসিস্টেম বৃষ্টির জল সঞ্চয়, সোলার এনার্জি এবং মাটিতে তৈরি বহুস্তরীয় জৈব আবরণের মাধ্যমে নিজেই নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে। এই নকশা আগামী ২০ বছর কোনো মানবীয় হস্তক্ষেপ ছাড়াই খাদ্য উৎপাদন ও কৃষিকাজ পরিচালনার ক্ষমতা রাখে। স্বাভাবিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এই ব্যবস্থাই মাটির উর্বরতা, প্রাকৃতিক কীট নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য বৈচিত্র্য বজায় রাখে। তাঁর এই অভিনব উদ্যোগের জন্য তিনি নীতি আয়োগ ও ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার সহ ৬০টিরও বেশি সম্মান পেয়েছেন। তাঁর খামার এখন বিএসসি থেকে পিএইচডি স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য জীবন্ত গবেষণা ক্ষেত্র। তিনি যুব সমাজকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকেন (Success Story)।

R Narasimman's Success Story will amaze you.

আরও পড়ুন:কাউন্টডাউন শুরু! বিজেপির নতুন সভাপতি পদে কে বসবেন? দিল্লিতে তুঙ্গে জল্পনা

এত সাফল্যের পরও নরসিম্মনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও দূরদর্শী। তিনি ভারতীয় বন জিনতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের সঙ্গে মিলে চন্দন ও দেশি কাঠের গাছের বাণিজ্যিকীকরণে কাজ করছেন। তাঁর লক্ষ্য দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া দেশি কাঠের প্রজাতিকে বাজারে প্রতিষ্ঠা করে দেশের কাঠ আমদানির উপর নির্ভরতা কমানো। পাশাপাশি তিনি অ্যাগ্রি–ট্যুরিজম শুরুর পরিকল্পনাও করছেন, যাতে শহরের মানুষ তাঁর মডেল খামারটি কাছ থেকে দেখতে পারে। নরসিম্মনের মতে, মাটি হলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, আর গাছ হলো পেনশন। তাঁর বিশ্বাস, যদি দেশের প্রতিটি কৃষক বছরে মাত্র ১০টি গাছ লাগান, তাহলে এক দশকের মধ্যে ভারত কাঠ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবে। তাঁর ছেলে, যিনি একজন চিকিৎসক, তিনিও এখন বাবার এই উদ্ভাবনী কৃষি মডেলে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন (Success Story)।