বাংলাহান্ট ডেস্ক : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান বাংলা সাহিত্যে প্রশ্নাতীত। তবে বাংলা চলচ্চিত্রেও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঘুরে ফিরে এসেছেন বারবার। বাংলা চলচ্চিত্রের আদিকাল থেকেই পরিচালকেরা শরণাপন্ন হয়েছেন শরৎচন্দ্রের। ২০২৪ সালেও তার ব্যতিক্রম নেই। সম্প্রতি অনির্বাণ চক্রবর্তীর পরিচালনায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অভাগীর স্বর্গ’ অবলম্বনে মুক্তি পেয়েছে ‘ও অভাগী।’
পরিচালক এই ছবিতে শুধুমাত্র গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পড়েছেন বাংলার প্রতিটি প্রান্তিক নারীর মননে। হাজার হাজার নারীকে ন্যূনতম চাহিদার বিনিময়ে কীভাবে সমাজের প্রতিটি স্তরে শোষিত হতে হয় তাও ফুটে উঠেছে এই ছবিতে। পরিচালকের কলমের জোড়ে এই ছবিতে উঠে এসেছে জমিদারের শাগরেদ থেকে পাড়া-প্রতিবেশী, লম্পট গায়েন ও তার একাধিক স্ত্রী সহ বিভিন্ন চরিত্র।
তবে অনির্বাণ চক্রবর্তীর এই ছবিতে প্রধান চরিত্র কিন্তু মৃত্যু। ছবির শুরু থেকেই অভাগীর একমাত্র কামনা-বাসনা মৃত্যু। গোটা ছবি জুড়ে অভাগীর সাথে যেন এক অদৃশ্য খেলা খেলে যায় মৃত্যু। মিথিলার জীবনে এই ছবি নিঃসন্দেহে অন্যতম একটি মাইলস্টোন হয়ে রয়ে যাবে। অভাবি লাবণ্যময়ী মিথিলা এই ছবির যেমন একটি দিক, অন্যদিকটি তেমনই অসহায় এক নারীর।
জমিদার সাগরেদ কেষ্টর চরিত্রটিও বেশ প্রশংসনীয়। জমিদার ও জমিদার গিন্নির চরিত্রে সুব্রত দত্ত ও দেবযানী চট্টোপাধ্যায়র অভিনয়ও যথাযথ। তাছাড়াও এই ছবিতে গান গেয়েছেন রূপঙ্কর, বাংলাদেশের অনিমেষ রায়। গানগুলিও বেশ সুন্দরভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে। তবে এই ছবির মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে রয়েছে সুজয় দত্তের সম্পাদনায়। ছোটবেলায় আমরা স্কুল পাঠ্য বইতে ‘অভাগীর স্বর্গ’ পড়েছি।
তবে সেই মন নিয়ে যদি এই ছবি দেখতে বসেন তাহলে কিন্তু বিষম খেতে পারেন। প্রথমেই বলেছি ‘অভাগীর স্বর্গ’ থেকে বেরিয়ে এসে অনির্বাণ চক্রবর্তী বড় ক্যানভাসে ফেলেছেন ‘অভাগীকে।’ সমাজের আর পাঁচটা প্রলোভনের মতো যৌনতাও বাদ যায়নি এই ছবি থেকে। বারংবার বিভিন্ন পর্যায়ে এই ছবিতে উঠে এসেছে যৌনতা। তবুও এই সময় দাঁড়িয়ে যুক্তিযুক্ত ভাবে অনির্বাণ চক্রবর্তী ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন হাজারো অভাগীকে।