বাংলাহান্ট ডেস্ক: প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত (India-Russia) সফরের ঠিক আগে দিল্লি ও মস্কোর মধ্যে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সমঝোতার ভিত্তি শক্ত হল। দুই দেশের সামরিক সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছল রেসিপ্রোকাল এক্সচেঞ্জ অফ লজিস্টিক সাপোর্ট (RELOS) চুক্তির মাধ্যমে, যার অনুমোদন মঙ্গলবার দিয়ে দিল রাশিয়ার সংসদের নিম্নকক্ষ স্টেট দুমা। এই চুক্তি কার্যকর হলে ভারত ও রাশিয়া পরস্পরের সেনাঘাঁটি, নৌবন্দর ও বায়ুসেনা ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে সহজে, যা দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে আরও গভীর করে তুলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধ বা কোনও জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে দুই দেশই একে অপরকে দ্রুত সামরিক লজিস্টিক সহায়তা দিতে পারবে, যা বাস্তবে কৌশলগত জোট হিসেবে কাজ করবে।
ভারত-রাশিয়ার (India-Russia) নতুন সামরিক চুক্তিতে সবুজ সংকেত মস্কোর
জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে সই করে ভারত ও রাশিয়া (India-Russia)। এরপর গত সপ্তাহে রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন RELOS চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য স্টেট দুমায় পাঠান। মঙ্গলবার সেই অনুমোদন মিলতেই দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও এক ধাপ এগোল। স্টেট দুমার স্পিকার ভিয়াচেস্লাভ ভোলোদিন বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর ও কৌশলগত। আমরা এই সম্পর্ককে অত্যন্ত মূল্য দিই। আজকের অনুমোদন আমাদের পারস্পরিক কৌশলগত সহযোগিতাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে।” তাঁর বক্তব্যেই স্পষ্ট, দুই দেশ একে অপরের প্রতি আস্থার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে চাইছে।
আরও পড়ুন: “সরকারি টাকায় বাবরি মসজিদ তৈরি করতে চেয়েছিলেন নেহেরু, বাধা দেন বল্লভভাই”, বিস্ফোরক দাবি রাজনাথের
নতুন চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের (India-Russia) সেনাবাহিনী এখন থেকে নির্বিঘ্নে একে অপরের সামরিক অবকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে। রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ ভারতের নৌবন্দরে ভিড়তে পারবে, একইভাবে ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজও যেতে পারবে রাশিয়ার ঘাঁটিতে। বায়ুসেনা, স্থলসেনা এবং অন্যান্য সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। ফলে যৌথ সামরিক মহড়া, মানবিক উদ্ধার অভিযান, প্রশিক্ষণ বা বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে দুই দেশ আগের তুলনায় আরও দ্রুত ও নির্ভুল সহযোগিতা করতে পারবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি শুধু লজিস্টিক সুবিধার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি কার্যত দুই দেশের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিকে আরও সমন্বিত এবং মজবুত করে তুলবে।
বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনার আবহে ভারত-রাশিয়া (India-Russia) চুক্তির গুরুত্ব আরও বেড়ে যাচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই চুক্তি আসলে দুই দেশের কৌশলগত নির্ভরতা ও আস্থার প্রতিফলন। বিশেষত, রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র, যা ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের সময় স্পষ্ট হয়েছিল। মার্কিন নৌবহরের হুমকি উপেক্ষা করে রাশিয়া সে সময় ভারতকে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে সমর্থন দিয়েছিল, যার ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছিল। ঠিক সেই প্রেক্ষাপটেই নতুন RELOS চুক্তি দুই দেশের রাজনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তুলছে।

সব মিলিয়ে, পুতিনের ভারত (India-Russia) সফরের আগে এই অনুমোদন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু সামরিক লজিস্টিক সহযোগিতা নয়, বরং ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের বিশ্বাস, আস্থা ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের নতুন প্রতীক। বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দুই দেশের পারস্পরিক সামরিক সহায়তা তাদের প্রতিরক্ষা সুদৃঢ় করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের অবস্থানকেও আরও শক্তিশালী করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।












