টিভি দেখে পান আইডিয়া! অভিনব পদ্ধতিতে চাষ শুরু করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন ধীরজের

Published on:

Published on:

Dheeraj Verma's Success Story will amaze you.
Follow

বাংলাহান্ট ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি জেলার কৃষক ধীরজ বর্মা প্রমাণ করে দিয়েছেন—সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেই কোনও মানুষ নিজের সাফল্যের কাহিনি (Success Story) নিজেই লিখতে পারে। বহু মানুষের হাতে সম্পদ ও সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগাতে না পারার কারণে তারা পিছিয়ে পড়ে। কিন্তু ধীরজ বর্মা একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই এমন একটি প্রযুক্তির সন্ধান পান, যা তাঁর চাষাবাদের পদ্ধতি ও আয়—দু’টোকেই আমূল বদলে দেয়। আজ তিনি স্ট্রবেরি চাষে হাইড্রোপোনিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন এবং তাঁর সাফল্যের গল্প বহু কৃষকের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছে।

ধীরজের অভিনব পদ্ধতিতে চাষের সাফল্যের কাহিনি (Success Story):

ঘটনা কয়েক বছর আগের। একদিন টিভি চ্যানেল বদলাতে বদলাতে ধীরজ বর্মার চোখ পড়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে, যেখানে দেখানো হচ্ছিল—ইজরায়েল কীভাবে হাইড্রোপোনিক্সে বিশ্বসেরা হয়ে উঠেছে। মাটি ছাড়া, শুধু পানি ও পুষ্টি উপাদান দিয়ে ফসল উৎপাদনের এই অনন্য পদ্ধতি তাঁর আগ্রহ জাগায়। তিনি বিস্মিত হন দেখে যে শুষ্ক জলবায়ু, জলের সঙ্কট ও ঘন জনসংখ্যার মাঝেও ইজরায়েল মাত্র এক একর জমিতে এমন ফলন তুলছে, যা বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভব। তখনই ধীরজ ভাবেন—যখন ইজরায়েল এত কম জমিতে এত কিছু করতে পারে, তখন তিনি ১০ একর জমির মালিক হয়েও পিছিয়ে থাকবেন কেন? এরপর তিনি হাইড্রোপোনিক্স প্রযুক্তি নিয়ে শতাধিক ভিডিও দেখেন, তথ্য সংগ্রহ করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন নিজের গ্রামে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করার (Success Story)।

আরও পড়ুন:শুধু চিন-আমেরিকাই নয়! পুতিনের ভারত সফরে চিন্তা বাড়ছে এই দেশেরও

ধীরজ বর্মা দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে প্রচলিত পদ্ধতিতে গম, ধান, মকাইসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করতেন। এমনকি খোলা মাঠে স্ট্রবেরি চাষও করতেন ৫ একর জমিতে। কিন্তু মাল্চিং, ড্রিপ সেচ, বিপুল শ্রমিক খরচ এবং বিশেষ করে আগাছা সমস্যা তাঁর খরচকে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল যে লাভের মার্জিন প্রায় থাকতই না। আগাছা পরিষ্কারে এক বিঘায় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হত। এসব সমস্যা তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল। ঠিক তখনই হাইড্রোপোনিক্স তাঁর কাছে আশীর্বাদ হয়ে আসে। ২০২১ সালে তিনি মধ্যপ্রদেশে গিয়ে ধাকড় ব্রাদার্সের অধীনে হাইড্রোপোনিক্স চাষের প্রশিক্ষণ নেন। সেখানে তিনি শেখেন—গাছকে মাটি নয়, বরং জল এবং ১৩ ধরনের অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান দিয়ে বড় করা হয়, যা উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধি ও ফলনে অত্যন্ত কার্যকর (Success Story)।

প্রশিক্ষণ শেষে ধীরজ বর্মা বাড়ি ফিরে নিজের খামারে ৩,৫০০ বর্গফুট জায়গায় একটি আধুনিক হাইড্রোপোনিক্স সেটআপ তৈরি করেন। কোকোপিট ব্যবহার করে সেখানে তিনি ৯,০০০ স্ট্রবেরির চারা লাগান। পুরো সেটআপ করতে সময় লাগে দেড় মাস এবং ব্যয় হয় প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। কিন্তু বিনিময়ে তিনি পান বিপুল সাফল্য। মাত্র দুই মাসের মধ্যেই তিনি পাঁচ টন স্ট্রবেরি উৎপাদনে সফল হন। চলতি বছরের শুরুতেই হাইড্রোপোনিক্সে উৎপাদিত স্ট্রবেরি বিক্রি করে মাত্র দুই মাসে তিন লক্ষ টাকা আয় করেন তিনি, যা তাঁর পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। একই সঙ্গে কম পানি, কম জমি ও কম শ্রমে বেশি উৎপাদনের সুবিধা তাঁর খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয় (Success Story)।

Dheeraj Verma's Success Story will amaze you.

আরও পড়ুন:‘মৃত প্যানেলকে বাঁচানোর চেষ্টা’, আপার প্রাইমারির অতিরিক্ত শূন্যপদ খারিজ করল হাইকোর্ট

আজ ধীরজ বর্মা শুধু সফল (Success Story) কৃষক নন, তিনি আধুনিক কৃষি উদ্ভাবনের এক অনন্য উদাহরণ। তিনি আশেপাশের কৃষকদেরও এই প্রযুক্তি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁর কথায়—“হাইড্রোপোনিক্স কোনও রকেট সায়েন্স নয়। আমার মতো একজন সাধারণ কৃষক যদি এই পদ্ধতি শিখে ভালো মুনাফা করতে পারে, তবে অন্যরাও পারবে।” টিভির একটি অনুষ্ঠান থেকেই শুরু হওয়া তাঁর এই যাত্রা আজ গ্রামীণ যুবকদের সামনে নতুন দিশা দেখাচ্ছে এবং প্রমাণ করছে—উদ্ভাবনই ভবিষ্যতের কৃষির মূল শক্তি।