বাংলাদেশের এই আসনে হিন্দুদের আধিপত্য! নির্বাচনে হিন্দু প্রার্থীর ওপরেই ভরসা কট্টর মুসলিম সংগঠনের

Published on:

Published on:

Follow

বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজনীতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খুলনা-১ আসন ঘিরে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলাভুক্ত এই আসনটি বহুদিন ধরেই হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা হিসেবে পরিচিত, যেখানে হিন্দু ভোটই জয়ের হিসাব-নিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই কারণে ২০২৬ সালের নির্বাচনে এবার বড় পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি। প্রথমবারের মতো কট্টর ইসলামি মতাদর্শে বিশ্বাসী দলটি একজন হিন্দু প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দীকে মনোনয়ন দিয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু কমিটির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দলীয় কার্যক্রমে যুক্ত থাকায় তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশের (Bangladesh) খুলনা বিভাগে হিন্দু প্রার্থী নির্বাচিত

বাংলাদেশের (Bangladesh) এ আসনটি বহু বছর ধরেই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৬ সালে এখান থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সময়ে দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় তাঁর ভার্চুয়াল সভাতেও বিপুল সংখ্যক হিন্দু কর্মী-সমর্থক যোগ দিয়েছিলেন, যা এই আসনে আওয়ামী লীগের জনভিত্তির শক্ত অবস্থানকে স্পষ্ট করেছিল। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায়, হিন্দু ভোটব্যাংক নিজেদের দিকে টানতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জামায়াত ও বিএনপি—যেখানে জামায়াতের তৎপরতাই বেশি নজর কেড়েছে। ঢাকাসহ একাধিক শহরে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে তাদের সভা-সমিতি করা হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় খুলনা-১ এ কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।

আরও পড়ুন: ধর্মীয় সমাবেশের আড়ালে মহিলা জিহাদিদের নিয়ে গোপন বৈঠক! ভারতের বিরুদ্ধে ফের ষড়যন্ত্র পাকিস্তানের?

জামায়াতে ইসলামি প্রথমে এ বাংলাদেশের (Bangladesh) আসনে তাদের প্রভাবশালী নেতা মাওলানা আবু ইউসুফকে প্রার্থী করেছিল। পরে দলের আমির শফিকুর রহমান খুলনায় এসে দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন এবং কৃষ্ণ নন্দীকেই দলের চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করেন। কৃষ্ণ নন্দী নিজেই জানান যে ইউসুফ সাহেব তাঁর জন্য প্রচারে নেমেছেন এবং এ সিদ্ধান্তে দলের ভেতরে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। পেশায় ব্যবসায়ী এই মাঝবয়সি ব্যক্তি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর গ্রামের বাসিন্দা—একটি এলাকা যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস গণহত্যার স্মৃতি বহন করে।

১৯৭১ সালের ২০ মে পাকিস্তানি সেনারা চুকনগরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১০-১২ হাজার মানুষকে হত্যা করে—যা বাংলাদেশের (Bangladesh) ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যাগুলির একটি। অধিকাংশ নিহত ছিলেন হিন্দু শরণার্থী, যারা বাঁচার তাগিদে ভারতে যাওয়ার জন্য সেখানটিকে অস্থায়ী ট্রানজিট হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের গবেষণায় উঠে এসেছে সেই দিনের নির্মমতা, বর্বরতা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সহযােগী হিসেবে রাজাকার-আল বদরদের ভূমিকা। সেই চুকনগরেরই এক হিন্দু নাগরিক কৃষ্ণ নন্দীর জামায়াতে ইসলামির প্রার্থী হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে আগ্রহ আরও বেড়েছে, বিশেষত এই দলটি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইনি।

Hindus dominate this seat in Bangladesh.

আরও পড়ুন: বড় পদক্ষেপ RBI-র! এবার জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্টেও বিনামূল্যে মিলবে একগুচ্ছ সুবিধা

কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেছেন, জামায়াতে ইসলামি একটি ‘নীতিনিষ্ঠ’ রাজনৈতিক দল এবং হিন্দু বিরোধী নয়। জানা গেছে, তিনি একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। স্থানীয় সংগঠনের সঙ্গে বিরোধের জেরে তিনি ২০০৫ সালে জামায়াতে ইসলামিতে যোগ দেন এবং ধীরে ধীরে দলীয় কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে উঠেন। হিন্দু-প্রধান এলাকায় তাঁকে প্রার্থী করা দলটির কৌশলগত সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে, যা খুলনা-১ আসনটিকে এবার বাংলাদেশের (Bangladesh) সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক ময়দানে পরিণত করেছে।