বাংলাহান্ট ডেস্ক: থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার (Thailand-Cambodia) মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। সোমবার ভোরে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সীমান্তের কাছে বিমান হামলা চালায়, যদিও তাদের দাবি—স্থানীয় সময় ভোর ৩টের দিকে কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকেই প্রথম আক্রমণ শুরু হয়। এই হামলায় এক থাই সেনা নিহত হন এবং আরও দুইজন আহত হন। অথচ মাত্র অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। এখন উভয় পক্ষই একে অপরকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করছে, ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
সংঘর্ষে জর্জরিত থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া (Thailand-Cambodia) সীমান্ত:
এই সংঘর্ষের কেন্দ্রে রয়েছে দুই দেশের (Thailand-Cambodia) দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ, বিশেষত ৯০০ বছরের পুরনো প্রিয়া বিহার বা শিব মন্দিরকে কেন্দ্র করে। ডাংরেক পর্বতমালার চূড়ায় অবস্থিত একাদশ শতাব্দীর এই মন্দিরটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হলেও এর আশেপাশের জমি দশকের পর দশক ধরে সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। থাই বাহিনী সাম্প্রতিক কয়েক মাসে ১০০ জনেরও বেশি কম্বোডিয়ান সৈন্যকে হত্যা করার দাবি করেছে, অন্যদিকে কম্বোডিয়া জানিয়েছে—তাদের ২১ জন সেনা নিহত, ৫০ জন সাধারণ মানুষও আহত হন এবং ৩ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিরোধের শেকড় ১৯০৭ সালের ফরাসি মানচিত্রে, যেখানে মন্দিরটিকে কম্বোডিয়ার ভূখণ্ড দেখানো হয়েছিল, যা পরে থাইল্যান্ড চ্যালেঞ্জ করে।
আরও পড়ুন:পুতিনের পর এবার ভারত সফরের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি! কবে আসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট?
১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) মন্দিরের উপর কম্বোডিয়ার (Thailand-Cambodia) সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতি দিলেও মন্দিরের চারপাশের ৪.৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে যায়। ২০০৮ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে মন্দিরের নিবন্ধন বিরোধকে আরও উসকে দেয়, যার পরবর্তী তিন বছরে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয় এবং হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়। পরে ২০১৩ সালে ICJ পুনর্ব্যক্ত করে যে মন্দির ও তার আশেপাশের এলাকা কম্বোডিয়ার অংশ। কিন্তু থাইল্যান্ডের বিপক্ষে গিয়ে আদালতের এই বিষয় আর কোনো হস্তক্ষেপ করতে না চেয়ে জানায়—সীমান্তের বাকি সমস্যাগুলো কেবল দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে।
মন্দিরটি কম্বোডিয়ার (Thailand-Cambodia) কাছে জাতীয় ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক গর্বের অন্যতম প্রতীক, আর থাইল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মতে এটি পরিত্যক্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড। দীর্ঘদিনের এই উত্তেজনা রাজনৈতিক অস্থিরতাও সৃষ্টি করেছে থাইল্যান্ডে। গত মাসে থাই প্রধানমন্ত্রী পাটোংটার্ন সিনাওয়াত্রা ও প্রাক্তন কম্বোডিয়ান প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের মধ্যে ১৭ মিনিটের ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর থাইল্যান্ডে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। ফোনালাপে পাটোংটার্ন হুন সেনকে “চাচা” বলে সম্বোধন করেন এবং কিছু থাই সেনা কমান্ডারকে আক্রমণাত্মক বলে উল্লেখ করেন। এতে সেনাবাহিনী ও রাজতন্ত্রপন্থী মহলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং সরকারের প্রধান মিত্র ভূমজাইথাই পার্টি জোট থেকে বেরিয়ে যায়।

আরও পড়ুন:দিল্লিগামী বন্দে ভারতে টিকিট ছাড়াই ৩০০ যাত্রীকে তুলল রেল
রাজনৈতিক চাপ ও জাতীয়তাবাদী ক্ষোভের জেরে শেষ পর্যন্ত ২৯ আগস্ট পাটোংটার্ন সিনাওয়াত্রাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়, যা দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সীমান্তে নতুন সংঘর্ষ পরিস্থিতিকে ফের অগ্নিগর্ভ করছে, এবং উভয় দেশ একে অপরকে দোষারোপ করায় স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন দুই (Thailand-Cambodia) দেশের কূটনৈতিক পদক্ষেপের দিকে, কারণ সামান্য ভুল বোঝাবুঝিও বড় ধরনের সংঘাত ডেকে আনতে পারে এই সংবেদনশীল সীমান্ত এলাকায়।












