বাংলাহান্ট ডেস্ক: পাকিস্তানে (Pakistan) ফের অশান্তির আবহ। বালোচিস্তানের স্বাধীনতার দাবির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নতুন করে স্বাধীন সিন্ধুদেশের দাবি উঠে গিয়েছে করাচির রাস্তায়। গত ৭ ডিসেম্বর সিন্ধ সাংস্কৃতিক দিবস উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে নিজেদের সংস্কৃতি ও পরিচয় উদযাপন করছিলেন। কিন্তু আনন্দঘন সেই জমায়েত দ্রুত উত্তপ্ত আন্দোলনের রূপ নেয়। সিন্ধ জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘জিয়ে সিন্ধ মুত্তাহিদা মাহাজ’-এর নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা স্বাধীন সিন্ধুদেশের দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন। ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ এবং ‘আজাদি’ স্লোগানে করাচির বহু এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের একাংশের মতে, এই আন্দোলন সিন্ধ অঞ্চলে বহুদিন ধরেই জমে থাকা অসন্তোষেরই বহিঃপ্রকাশ।
স্বাধীন সিন্ধুদেশের দাবিতে উত্তাল পাকিস্তান (Pakistan):
মিছিলের আকার বাড়তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন মিছিলের পথ পরিবর্তনের চেষ্টা করে। আর সেই সিদ্ধান্তই হিংসার সূচনা ঘটায়। পথ বদলের নির্দেশে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করেন। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশও পালটা কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। সংঘর্ষে অন্তত পাঁচ পুলিশকর্মী আহত হন। ঘটনার পর পুলিশ ৪৫ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, করাচির মতো মহানগরে প্রকাশ্যে পাকিস্তানবিরোধী (Pakistan) স্লোগান আগামিদিনে আরও বড় অশান্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই আন্দোলনের আগেই পাকিস্তানের (Pakistan) এক টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত একটি রাজনৈতিক আলোচনার জেরে উত্তেজনা বাড়ছিল। সেই আলোচনায় দাবি করা হয়, সংবিধানের ১৮তম সংশোধনীর পর একসময় এমকিউএম নেতা আলতাফ হোসেন নাকি সিন্ধুর প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার মির্জাকে বলেছিলেন, “সিন্ধুদেশের কার্ড এখন আমাদের হাতে।” এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সিন্ধুতে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও চড়ে যায়। জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে মনে করা হচ্ছে, দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সংকটই নতুন করে স্বাধীনতার দাবিকে উস্কে দিয়েছে।
এদিকে সিন্ধুর অস্থিরতা সম্প্রতি ভারতের রাজনৈতিক মহলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। গত মাসেই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং মন্তব্য করেন, তাঁর প্রজন্মের বহু সিন্ধি হিন্দু কখনওই সিন্ধুর ভারত থেকে বিচ্ছিন্নতাকে মানতে পারেননি। তিনি ইঙ্গিত দেন, ইতিহাসের পরিক্রমায় সিন্ধু আবার ভারতভুক্ত হতে পারে। তাঁর এই মন্তব্য পাকিস্তানে (Pakistan) তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য এবং সিন্ধুতে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন—এই দুইয়ের প্রভাবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের।

আরও পড়ুন:আরও শক্তিশালী হবে ভারতের AI সেক্টর! ১.৫ লক্ষ কোটির বিনিয়োগ মাইক্রোসফটের, ঘোষণা নাদেলার
উল্লেখ্য, স্বাধীন সিন্ধুদেশের দাবি নতুন নয়। প্রথমবার এই দাবি ওঠে ১৯৬৭ সালে, আর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সেই আন্দোলন আরও জোরালো হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের (Pakistan) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত সিন্ধু প্রদেশটি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রদেশ, যা ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তানের অংশ হয়। আজ আবার সেই অঞ্চলে স্বাধীনতার দাবি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় আশঙ্কা বাড়ছে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও গভীর হতে পারে।












