বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ব্রিগেড ময়দানে গীতাপাঠের দিনে চিকেন প্যাটিস বিক্রি ঘিরে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে বড় রাজনৈতিক ঝড়ে পরিণত হয়েছে। দুই প্যাটিস বিক্রেতাকে মারধরের অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার, জামিন এবং পাল্টা রাজনৈতিক সওয়ালের মাঝেই এবার নিজের দলের একাংশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিলেন তমলুকের সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। নাম না করেই দলের ভিতরের একটি অংশকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন তিনি।
কাদের ‘কুলাঙ্গার’ বললেন অভিজিৎ (Abhijit Ganguly)?
চিকেন প্যাটিস কাণ্ডে এবার বেসুরো সুর শোনা গেল তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Abhijit Ganguly) গলায়। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাম না করে দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ওই অংশকে তিনি ‘কুলাঙ্গার’ বলে কটাক্ষ করেন, এমনকি তিনি বলেন তাঁদের ‘ক্লাস ফোরের বিদ্যাও নেই’।
ঘটনা প্রসঙ্গে অভিজিৎ (Abhijit Ganguly) বলেন, “যারা এসব করে বেড়াচ্ছেন, এই সব কুলাঙ্গার…” বলে থেমে যান তিনি। দৃশ্যত বিরক্ত সাংসদ পরে ব্যাখ্যা করে বলেন, কুলাঙ্গার বলতেই হবে, কারণ অভিযুক্তদের মধ্যে বিজেপির একটি অংশ রয়েছে। তাঁর কথায়, একজন খেটে খাওয়া মানুষ মাথায় করে একটা বাক্স নিয়ে খাবার বিক্রি করেন। যেখানে ভিড় পান, সেখানেই যান। সেটাই তাঁর উপার্জনের পথ।
অভিজিৎ (Abhijit Ganguly) স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ওই বিক্রেতার কায়িক শ্রমের প্রতি কোনও দরদ দেখানো হয়নি। বরং তাঁকে মারধর করা হয়েছে, তাঁর বাক্স ভেঙে দেওয়া হয়েছে, পুঁজিটা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে তিনি ‘নিম্ন রুচির’ রাজনীতি বলে আখ্যা দেন এবং বলেন, এই ধরনের বিষয় নিয়ে বাংলায় রাজনীতি হওয়া লজ্জার।
তিনি আরও বলেন, পড়াশোনা নেই বলেই এই ধরনের কাজ করা সম্ভব। অনেকের হয়তো ডিগ্রি আছে, কিন্তু ক্লাস ফোরের চেয়েও তাঁদের বিদ্যা এগোয়নি বলে মন্তব্য করে অভিজিৎ। একজন দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষকে মারধর করে তাঁর উপার্জনের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া আসলে গরিবদের শোষণ বলেও ব্যাখ্যা করেন তিনি। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের অবিলম্বে দল থেকে বিতাড়িত করারও দাবি জানান অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ব্রিগেড ময়দানে গীতাপাঠের দিন এই চিকেন প্যাটিস কাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। অভিযোগ ওঠে, ওই দিন ব্রিগেডে কেন চিকেন প্যাটিস বিক্রি করা হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে দুই প্যাটিস বিক্রেতা শেখ রিয়াজুল ও মহম্মদ সালাউদ্দিনকে মারধর করা হয়। কিল-চড়-ঘুষি, এমনকি একজনকে কান ধরে ওঠবস করতেও বাধ্য করা হয়। ঘটনার পর দুই বিক্রেতা ময়দান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। রুজু হয় এফআইআর। তদন্তে নেমে পুলিশ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে। যদিও পরে তাঁরা জামিন পান।
এই ঘটনার পরেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, গ্রেপ্তার হওয়া তিন জনের পক্ষেই সওয়াল করেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ওই তিন জনের জন্য বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের কথাও ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চরম বিতর্ক শুরু হয়।

এই আবহেই নাম না করে নিজের দলের সেই অংশের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। একদিকে শুভেন্দু অধিকারী যেখানে অভিযুক্তদের নিরাপত্তা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করছেন, সেখানে অভিজিৎ তাঁদের দল থেকে বিতাড়িত করার দাবি তুলছেন। ফলে প্রশ্ন উঠছে, অভিজিতের ইঙ্গিত ঠিক কার দিকে? দলের ভিতরের কোন অংশ তাঁর নিশানায়? রাজনৈতিক মহলে এই নিয়ে শুরু হয়েছে জোর কাটাছেঁড়া। উল্লেখ্য, এর আগেও তমলুক এলাকায় দলেরই একাংশ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছিল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। এবার সেই ক্ষোভ আরও স্পষ্ট হয়ে প্রকাশ্যে এল।












