বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থকদের বিরুদ্ধে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন বিঘ্নিত করতে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করার অভিযোগ তুলেছেন মহম্মদ ইউনূস (Mohammed Yunus)। সোমবার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার জন্য মার্কিন বিশেষ দূত এবং ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোরের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনাকালে তিনি এ দাবি করেন। দেশটির সরকারি সংবাদসংস্থা বাসস জানায়, প্রায় আধ ঘণ্টাব্যাপী এই আলোচনায় ইউনূস বলেন, “ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শাসনের সমর্থকেরা নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে। তাদের পলাতক নেতা হিংসা উস্কে দিচ্ছেন।” সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও ‘ক্ষমতাচ্যুত শাসন’ বলতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাঠামোকেই ইঙ্গিত করেন তিনি।
হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নির্বাচনে ব্যাঘাত ঘটানোর অভিযোগ ইউনূসের (Mohammed Yunus)
ইউনূস (Mohammed Yunus) গোরকে আশ্বাস দেন যে বাংলাদেশে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর বক্তব্য, “দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। স্বৈরাচারী শাসনকালে তা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।” তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। এই আলোচনায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য ও শুল্ক ইস্যু প্রাধান্য পেলেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সম্প্রতি নিহত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মী ওসমান হাদির প্রসঙ্গও উত্থাপিত হয়।
আরও পড়ুন:পাল্টা চাপ তৈরির চেষ্টায় ইউনূসের কারসাজি! দিল্লির পর রাতারাতি আরও ২ ভিসা কেন্দ্র বন্ধ করল বাংলাদেশ
গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন ঘোষণার পরপরই দেশটিতে বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটতে শুরু করে। ওসমান হাদির মৃত্যুর পর গত বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার গ্রিগোরাইভিচও নির্বাচনপূর্ব শান্তি ফিরে আসার কামনা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। দূতাবাসের প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ভোটের আগে অশান্তি আরও বাড়তে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কূটনীতিক গোরের সঙ্গে ইউনূসের আলোচনা এবং তাঁর উত্থাপিত অভিযোগকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের গভীর মনোযোগেরই প্রতিফলন।

আরও পড়ুন: বিচারপতি বসুর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ! চাকরি বাতিলের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা
অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার মধ্যে দিয়ে চলা বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ কতটা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, তা নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মাঝে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের বক্তব্য সরকার ও বিরোধী জোটের মধ্যকার বক্তব্যের পার্থক্য আরও স্পষ্ট করেছে। এখন দেখার বিষয়, অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের এই পরিবেশে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কতটা সুরক্ষিত থাকবে এবং নির্ধারিত তারিখে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে কিনা।












