বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নদিয়ার হাঁসখালিতে জন্মদিনের পার্টির নামে ডেকে নিয়ে গিয়ে এক নাবালিকাকে গণধর্ষণ ও তার মৃত্যুর ঘটনায় (Hanskhali Incident) অবশেষে বড় রায় দিল আদালত। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে তৃণমূল নেতার ছেলে সোহেল গয়ালি সহ তিন জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে এই রায়েও পুরোপুরি খুশি নন নির্যাতিতার পরিবার।
হাঁসখালির (Hanskhali Incident) ঘটনায় কী রায় দিল আদালত?
রানাঘাটের বিশেষ পকসো আদালত মঙ্গলবার হাঁসখালি নাবালিকা নির্যাতন ও মৃত্যুর মামলায় (Hanskhali Incident) সাজা ঘোষণা করে। আদালত তৃণমূল নেতার ছেলে সোহেল (ব্রজ) গয়ালি, প্রভাকর পোদ্দার এবং রণজিৎ মল্লিক, এই তিন জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। এছাড়া সোহেলের বাবা তথা তৃণমূল নেতা সমরেন্দ্র গয়ালি, দীপ্ত গয়ালি এবং আরও এক জনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
নাবালক অভিযুক্তের ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত?
এই মামলার মোট ৯ জন দোষীর মধ্যে একজন ঘটনার সময় নাবালক ছিল। সেই কারণে তাকে আপাতত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে আদালত স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, তাকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে। এক বছর পর তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
২০২২ সালের ৪ এপ্রিল কী ঘটেছিল?
২০২২ সালের ৪ এপ্রিল নদিয়ার হাঁসখালির বগুলা এলাকায় একটি বাড়িতে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে ১৪ বছরের এক কিশোরীকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেখানে তাকে মদ খাইয়ে গণধর্ষণ করা হয়। অভিযোগ, প্রবল রক্তক্ষরণের জেরে পরদিন ভোরে ওই নাবালিকার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর কোনও চিকিৎসকের শংসাপত্র ছাড়াই তড়িঘড়ি গ্রামের এক অ-নথিভুক্ত শ্মশানে দেহ দাহ করা হয় (Hanskhali Incident)।
ঘটনার চার দিন পর কিশোরীর মা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। প্রথমে রাজ্য পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ১৪ এপ্রিল মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই ৮৫ দিনের মধ্যে ২০৯ পাতার চার্জশিট জমা দেয়। দীর্ঘ তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া শেষে তিন বছর আট মাস ন’দিন পর সোমবার অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক
হাঁসখালি মামলা সামনে আসার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, “মেয়েটার শুনেছি অ্যাফেয়ার ছিল! একে কি ধর্ষণ বলবেন?” এছাড়াও তিনি বলেছিলেন, “রেপড বলবেন? না প্রেগন্যান্ট বলবেন? না লাভ অ্যাফেয়ার্স বলবেন?”, এই মন্তব্য রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
রায় ঘোষণার পরেও হতাশা প্রকাশ করেন নির্যাতিতার মা। তিনি বলেন, “জজসাহেবের এই রায়ে খুশি হতে পারলাম না। আমরা ওদের ফাঁসি চেয়েছিলাম। যদি ফাঁসি হত, তাহলে খুশি হতাম। আমার মেয়েটাকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল। ওই নরপশুগুলো সব শেষ করে দিল।” এই ঘটনায় (Hanskhali Incident) সেই সময় রাজ্যজুড়ে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। অভিযোগ ওঠে, শাসক দলের একাংশের চাপেই তড়িঘড়ি দেহ দাহ করা হয়েছিল। বিচারক সৌমেন গুপ্তর এজলাসে দেওয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন অভিযুক্তদের আইনজীবী।

আরও পড়ুনঃ মাত্র ৬ লক্ষ টাকায় নিজের ঘর! অসহায়দের জন্য বড় সিদ্ধান্ত নবান্নের
দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ার পর হাঁসখালি কাণ্ডে (Hanskhali Incident) আদালতের এই রায় ন্যায়বিচারের পথে একটি বড় ধাপ হলেও, নির্যাতিতার পরিবারের যন্ত্রণা ও ক্ষোভ এখনও রয়ে গেল।












