স্বামী-স্ত্রী’ও পালন করেন রাখিপূর্ণিমা! ভারতের কোথায় হয় সেই উৎসব?

বাংলা হান্ট ডেস্ক : দেশ জুড়ে আজ মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে রাখি পূর্ণিমা (Rakhi)। ভাই বোনের প্রবিত্র এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক ভাই-দাদাদের হাতে মঙ্গল সুতো পরিয়ে থাকেন দিদি বোনেরা। ভাই বোনের এই মধুর সম্পর্ক যাতে আরও অটুট থাকে তারই প্রতীক এই উৎসব। যদিও বাংলায় রাখি পূর্ণিমা (Rakhi) উৎসবের রয়েছে আলাদাই বিশেষত্ব।  ঠিক তেমনি আমাদের এই নানা ভাষা নানা পরিধানের দেশ ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে রাখি পূর্ণিমা (Rakhi) উৎসবকে ঘিরে রয়েছে নানান রীতি-রেওয়াজ।

রাখি পূর্ণিমার (Rakhi) অজানা কাহিনী

বৈচিত্র্যময়  ভারতবর্ষের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে পা বাড়ালেই বদলে যায় খাদ্যাভ্যাস, ভাষা,পোশাক রুচি সবকিছুই। ঠিক তেমনি এই একই উৎসব দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হয় বিভিন্ন রূপে। তার পিছনেও রয়েছে আলাদা আলাদা মাহাত্ম। রাখি পূর্ণিমা (Rakhi) দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ভাবে পালন করা হয়ে থাকে। তাই শুধু ভাই বোনের সম্পর্ক অটুট কিংবা তাদের মঙ্গল কামনাই নয় এই রাখি পূর্ণিমা ঘিরে রয়েছে আরো নানান অজানা ইতিহাস। যার সাথে বিশেষ যোগ রয়েছে পৌরাণিক কাহিনীরও।

এক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হয় মহাভারতের কথা। কথিত আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একবার হাত কেটে গিয়েছিল। তখন নিজের শাড়ির আঁচল ছিড়ে তাঁর হাতে বেঁধে দিয়েছিলেন দ্রৌপদী। তখন প্রতিদানে কিছু দিতে না পারলেও সেসময় শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে বচন দিয়েছিলেন প্রতিদানে তিনি যে কোন পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় তাকে রক্ষা করবেন। এরপর ভরা রাজসভায় দুর্যোধন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করে ঠিক তখনই ঋণশোধ করতে শ্রীকৃষ্ণ বস্ত্র দিয়ে দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষা করেছিলেন। এই কারণেই আজও রাখি পূর্ণিমার দিন ভাই-দাদারা আজীবন দিদি বোনদের সম্মান রক্ষার অঙ্গীকার করে। 

অন্যদিকে রাজস্থানে একজন নারী আর একজন নারীর হাতে রাখি পরিয়ে পালন করেন রাখি পূর্ণিমা। একে বলা হয় ‘লুম্বা রাখি’ রাজস্থানী শব্দ ‘লুম্বা’ কথার অর্থ হলো চুরি। প্রকৃত অর্থে নারী শক্তিকে উদযাপন করাই এই প্রথার মূল উদ্দেশ্য।একইভাবে মহারাষ্ট্রে রয়েছে নারিয়াল পূর্ণিমা। যা শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে পূর্ণিমা তিথিতে সমুদ্র উপকূলবর্তী মহারাষ্ট্রে পালন করা হয়। এই উৎসবে মূলত সমুদ্রে নারকেল অর্পণ করে ভগবান বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা করা হয়।

আরও পড়ুন : ‘নির্লজ্জ-মেরুদন্ডহীন!’ আরজিকর কাণ্ডে প্রতিবাদ নেই, দেবের সমালোচনায় মুখর ভক্তরা

শুধু তাই নয় ভারতে বহিরাগত শক্তি আক্রমণের সাথেও বিশেষ ভাবে জড়িত রয়েছে এই রাখি বন্ধন উৎসব। ইতিহাস সাক্ষী ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার যখন ভারত আক্রমণ করেছিলেন তখন আলেকজান্ডারের স্ত্রী তার স্বামীর সুরক্ষার কথা ভেবে রাজা পুরুকে একটি রাখি পাঠিয়েছিলেন।  সেই রাখি গ্রহণ করে তার সম্মান রক্ষার্থে পুরু আলেকজান্ডারকে আক্রমণ করা থেকে বিরত ছিলেন।

rakhi 2

এখানেই শেষ নয়, জানলে অবাক হবেন শুধু ভাই-বোনরাই নন একজন স্ত্রীও স্বামীর হাতে এই বিশেষ দিনে রাখি পরিয়ে থাকেন। হিন্দু পুরাণের কাহিনী অনুসারে জানা যায় একবার দেবরাজ ইন্দ্র রাক্ষসদের সঙ্গে যুদ্ধে যাচ্ছিলেন। তখন তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণী স্বামীর মঙ্গল কামনার জন্য দেবরাজের হাতের কব্জিতে একটি সুতো বেঁধে দিয়েছিলেন আর এই দিনটি ছিল রাখী পূর্ণিমা। 

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর