বাংলা হান্ট ডেস্ক: বাংলায় কিংবা ভারতে কালী মন্দির থাকবে, কালীপুজো এটাই কিন্তু কট্টর মুসলিম দেশ পাকিস্তানেও (Pakistan) নাকি রয়েছে জাগ্রত মা কালীর মন্দির। পাকিস্তানের (Pakistan) হিন্দু মন্দির থাকা আর কাল্পনিক কাহিনী বিষয়টি যেন একই। কারণ সকলেই জানেন, পাকিস্তান (Pakistan) এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্কের সমীকরণটা ঠিক কেমন। সেখানে হিন্দুদের কোন জায়গা নেই। সংখ্যালঘু হিন্দুরা থাকেন ভয়ে। কিন্তু এই দেশেই নাকি স্বয়ং মা কালী খাড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রতিদিন নিয়ম মেনে চলছে পুজো। কালীপুজোর রাতেও মহাসমারোহে হয় পুজো। এমনকি মায়ের টানে ছুটে আসেন মুসলিম ভাই বোনেরাও। কি বিশ্বাস হচ্ছে না নিশ্চয়ই? তবে আমি আপনি বিশ্বাস না করলেও এমনটাই ঘটছে।
পাকিস্তানের (Pakistan) কোথায় রয়েছে মা কালীর মন্দির?
স্বাধীনতার পর থেকে ওপার মহল্লায় বাস করা হিন্দুরা ভারতে চলে আসেন। আর এরপরই ধর্মীয় মতান্তরের কারণে ওখানে থাকা শত শত হিন্দুদের মন্দির ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু তার মধ্যে একটি মন্দির এখনো ভাঙ্গা যায়নি। সেখানে জবরদখল তো দূর মন্দিরের গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচড় কাটতে পারেনি মৌলবাদীরা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, কোন দৈবিক শক্তির কারণে এই মন্দির নাকি ভাঙ্গা যায়নি। জানা গিয়েছে, দেশ ভাগ হওয়ার অনেক আগে থেকেই এই মন্দির এখানে প্রতিষ্ঠিত। ১৫০০ বছরের পুরনো এই মন্দির। মন্দিরের নাম কালাটেশ্বরী মন্দির।
এখানেই প্রতিবছর কালীপুজোর সময় তিন দিন ধরে চলে পুজো। বালুচিস্তানের কালাট অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত এই কালীমন্দির পাকিস্তানের (Pakistan) অন্যতম পুরনো মন্দির। পাকিস্তানের ( Pakistan ) খনিজ পদার্থের প্রদেশ হচ্ছে বালুচিস্তান। সতীর ৫১ পীঠের মধ্যে এটিও হচ্ছে অন্যতম একটি পীঠ। যদিও এই মন্দির যখন তৈরি হয় তখন বালুচিস্তানের জন্ম হয়নি। আর না তখন হয়েছে দেশভাগ। তবে বর্তমানে এই মন্দির এখনো একইভাবে জাগ্রত।
এখানে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিমরাও পুজো দিতে আসেন। এই মন্দিরে দেবী সদা ক্রোধান্বিতা, রণরঙ্গিনী, করাল বদনা। কারোর কাছে তিনি কালাট কালী মাতা, আবার কারোর কাছে তিনি কালাটেশ্বরী মাতা। ২০ ফুট উচ্চতার এই প্রতিমা সর্বদা রণসাজেই সজ্জিতা। গলায় করোটির মালা, দশ হাতে রয়েছে ত্রিশূল, গদা, তরবারি, ঢাল, শঙ্খ, চক্র, ধনুক, নরমুণ্ড ও খঞ্জর। দেখলে মনে হয় যেন দীপান্বিতা সেজে উঠেছেন নিজের সাজে।
আরও পড়ুন : তোলপাড় বিশ্বজুড়ে! তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল বলে! প্রকাশ্যে এল ভয় ধরানো খবর, জানুন বিস্তারিত
জানা গিয়েছে, যেমন আমাদের বাংলায় কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে মা কালীর পূজো হয়, তেমনি এই মন্দিরেও একই সময় হয় কালীপুজো। টানা তিনদিন ধরে চলে এই পুজা। ষোড়শ উপাচার, ভোগ উৎসর্গ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আচারের মাধ্যমে দেবীর আরাধনা করা হয়। জানা যায় এখানে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দশনাার্থীরা ভিড় জমান। পাশাপাশি মায়ের টানে এই সময় মুসলিমরাও ভিড় জমান মন্দিরে। তবে শুধু কালীপুজো নয়, প্রতিদিনই এখানে অত্যন্ত নিষ্ঠা ভরে পূজো করা হয়। এই মন্দিরে কালী মাতার মূর্তির পাশাপাশি একেবারে সামনে রাখা আছে গুরু নানকের ছবি। বলা হয় শুধু হিন্দু মুসলিম নয়, একই সাথে শিখদের কাছেও এই মন্দিরের বিশেষ গুরুত্ব।
জানা গিয়েছে, বিগত অনেক বছর ধরে এই অঞ্চলে হিন্দু, মুসলিম সহ বিভিন্ন জাতির মানুষ এই মন্দিরকে নিয়ে এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। কত মৌলবাদী, উগ্রবাদীরা এলো গেল কিন্তু কেউ এই মন্দিরকে টলাতে পারল না। ধর্মীয় ভেদাভেদের এই ধারায় এক অন্য চিত্র ফুটে উঠছে পাকিস্তানে (Pakistan) । যেখান থেকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে, “ধর্ম যার যার, কিন্তু ভগবান সবার।”