বাংলা হান্ট ডেস্কঃ যত দিন যাচ্ছে ততই যেন নতুন মোড় নিচ্ছে রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি মামলা (Recruitment Scam Case)। সম্প্রতি এই মামলায় পঞ্চম অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি (Enforcement Directorate)। সেখানে পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে (Manik Bhattacharya) নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছে ইডি।
ইডির দাবি সেই সময় নাকি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে একটি ‘কনফিডেনশিয়াল’ বিভাগ তৈরি করা হয়েছিল। যার দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya)। ইডির আরও দাবি পর্ষদের ওই গোপন বিভাগের নাম ছিল ‘টেট কনফিডেন্সিয়াল’। ওই নামেই একাধিক ‘ব্ল্যাঙ্ক’ চেক বরাদ্দ করা হত।
কার ঠিকানায় ব্ল্যাঙ্ক চেক পাঠাতেন মানিক (Manik Bhattacharya)?
সূত্রের খবর, সমস্ত চেক পাঠানো হত অজানা ঠিকানায়। জানা যাচ্ছে, ২০১২ সালের পর থেকে এই ধরনের ‘কনফিডেনশিয়াল’ বিল তৈরি করা শুরু হয়। ইডি জানিয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পর্ষদের বিভিন্ন কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছে মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya) সংক্রান্ত আরও বেশ কিছু অজানা তথ্য। কর্মীরা জানিয়েছেন মানিক সভাপতি হয়ে যোগ দেওয়ার পর বেশ কিছু নিয়মেও বদল এনেছিলেন।
কোন রকম লিখিত বা নথিভুক্ত প্রমাণ নয় মৌখিকভাবেই একাধিক নির্দেশ দিতেন তিনি। যদিও তার আগে এই নিয়ম ছিল না। আগে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে ফাইলের মাধ্যমে নথিভুক্ত করেই কর্মীদের যাবতীয় নির্দেশ দেওয়া হত। কিন্তু মানিক (Manik Bhattacharya) আসার পরে তিনি মৌখিক নির্দেশের মাধ্যমেই একাধিক কাজ করাতেন। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসবের কোনো নথিভুক্ত প্রমাণ থাকত না।
পর্ষদের এই গোপন বিভাগ সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার জন্য অর্ণব বসু এবং গৌতম পুততুন্ড নামের দুই কর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। অর্ণব ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চুক্তিভিত্তিক কর্মী। আর পর্ষদের হিসাব রক্ষক ছিলেন গৌতম পুততুন্ড। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ইডি জানতে পারে, ওই গোপন বিভাগের জন্য তৈরী বিলগুলি অন্যান্য রসিদের চেয়ে একেবারে আলাদা ছিল।
আরও পড়ুন: ঢেলে সাজাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, বিশেষ নজর স্বাস্থ্যে! বছর শেষেই নবান্নে বিরাট রদবদল
কার জন্য ওই রসিদ করা হচ্ছে, তা জানা যেত না। মানিক নিজে ওই রসিদগুলির কাজ দেখতেন। আরসি বাগচীর মাধ্যমে ওই বিল তৈরির নির্দেশ আসত গৌতমের কাছে। মানিকের মুখের কথায় বিল তৈরি হত। বিল তৈরী হওয়ার পর গৌতম-ও ব্ল্যাঙ্ক চেক তুলে দিতেন আরসি বাগচীর হাতে। এরপর ‘টেট কনফিডেনশিয়াল’ শিরোনামে বিলগুলি মানিকের কাছে পাঠানো হত।
তিনি সেই চেক নিয়ে অজানা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিতেন। কার অ্যাকাউন্টে, কত টাকা যেত, তা মানিক ছাড়া আর কারও জানার উপায় ছিল না। কিন্তু কী কারণে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে এই গোপনীয় বিভাগ তৈরী হয়েছিল এবার তা নিয়েই তৈরী হয়েছে রহস্য। প্রসঙ্গত প্রাথমিকের দুর্নীতি মামলা প্রকাশ্যে আসতেই কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে মানিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেসময় তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। দু’বছর জেলে থাকার পর অবশেষে সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন মানিক।