বাংলাহান্ট ডেস্ক:- ফের একবার ভারতের শুল্কনীতি নিয়ে গর্জে উঠলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। তাঁর অভিযোগ, ভারত, চিন এবং ব্রাজিলের মতো দেশগুলি বিপুল অঙ্কের শুল্ক চাপিয়ে আমেরিকার (America) সঙ্গে একতরফাভাবে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, যার জেরে মার্কিন বাজারে ক্ষতির মুখে পড়ছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তাঁর প্রশাসন চাপ দেওয়ার ফলেই ভারত (India) সম্প্রতি মার্কিন পণ্যের উপর থেকে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তিনি জলের মতো পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের উপর থেকে কোনও শুল্ক কমাবে না।
কোনো শর্তেই শুল্ক কমাতে নারাজ ট্রাম্প (Donald Trump)
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ট্রাম্প (Donald Trump) বলেন, “ভারত এখন বলছে তারা আমেরিকার পণ্যে শুল্ক বসাবে না। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত অনেক আগে নেওয়া উচিত ছিল। সত্যি বলতে, আমরা ভারতের কাছে খুব অল্প পণ্য বিক্রি করি। অথচ তারা প্রচুর পরিমাণে জিনিসপত্র আমাদের বাজারে ঢোকায়। আমরাই তাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। কিন্তু ভারতে মার্কিন পণ্যের জায়গা খুবই সীমিত।” মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প আরও বলেন, ভারতীয় পণ্যের উপর থেকে শুল্ক কমানোর কোনও পরিকল্পনা আপাতত নেই। তাঁর বক্তব্য, “ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালই, কিন্তু এতদিন তা ছিল একপাক্ষিক। সেই সমীকরণ আমি পাল্টে দিয়েছি।”
আরও পড়ুন:- ভারত-ইউরোপের মধ্যে আরও গভীর হবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক? কী জানালেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর?
এরপর বুধবার এক রেডিও সাক্ষাৎকারে এই নিয়ে আরও সুর চড়াতে শোনা গেল তাঁকে। ট্রাম্প (Donald Trump) বলেন, “চিন আমাদের শুল্কে মেরে ফেলছে। ভারতও তাই করছে। ব্রাজিলও একই কাজ করছে।” তিনি দাবি করেন, শুল্কনীতি নিয়ে পৃথিবীর অন্য যেকোনও মানুষের চেয়ে তিনি বেশি জানেন। তাঁর কথায়, আমেরিকা যখন ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপাতে শুরু করে, তখন থেকেই নয়াদিল্লি ধীরে ধীরে শুল্ক কমাতে বাধ্য হয়। তাঁর ব্যাখ্যা, “যদি আমার শুল্ক না থাকত, তারা কোনওদিন এমন প্রস্তাব দিত না। তাই শুল্ক থাকা জরুরি। শুল্ক থাকলেই আমরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হব।”
তবে এই নীতি নিয়ে ট্রাম্প (Donald Trump) নিজ দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। এক মার্কিন আপিল আদালত সম্প্রতি তাঁর শুল্কনীতিকে “অবৈধ” বলে রায় দেয়। এর পাল্টা জবাবে ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন, “আদালত ভুলভাবে বলেছে আমাদের শুল্ক তুলে নিতে হবে। কিন্তু তারা জানে, শেষ পর্যন্ত আমেরিকাই জিতবে।”
বর্তমানে ট্রাম্প (Donald Trump) ভারতের উপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যা বিশ্বে অন্যতম উচ্চ হার বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জন্য ২৫ শতাংশ শুল্ক, যা ওয়াশিংটন ‘শাস্তি’ হিসেবে চাপিয়েছে। নয়াদিল্লি এই সিদ্ধান্তকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে জানিয়েছে, এটি সম্পূর্ণ ‘অন্যায্য’ এবং ‘অযৌক্তিক’। ভারতের মতে, এই ধরনের নীতি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ককে দুর্বল করছে এবং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

আরও পড়ুন:-“আর্থিক দিক থেকে মহাশক্তিশালী ভারত”, চিনের মাটি থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিলেন পুতিন
ট্রাম্প (Donald Trump) আরও একবার স্পষ্ট করলেন যে, শুল্ক তাঁর কাছে কেবল রাজস্ব বৃদ্ধির উপায় নয়, বরং এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ার। তবে তাঁর এই অবস্থান ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে, যা ভবিষ্যতের বাণিজ্য আলোচনার গতিপথও নির্ধারণ করতে পারে।