বাংলা হান্ট ডেস্ক: মাঝেমধ্যেই এমন কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা আমাদের সামনে আসে যেগুলি রীতিমতো অবাক করে দেয় প্রত্যেককেই। এমনিতেই আকাশে বিদ্যুতের ঝলক আমরা তো প্রত্যেকেই দেখেছি। কিন্তু, আপনি কি কখনও মেঘ থেকে মহাকাশের দিকে রঙিন আলোর ছটা (বলা ভালো বজ্রপাত) যেতে দেখেছেন? নিশ্চয়ই নয়। তবে, সম্প্রতি ভুটানের (Bhutan) হিমালয়ে (Himalayas) একটি বিরল দৃশ্য সামনে এসেছে। যেখানে মেঘ থেকে অদ্ভুত আলোর ছটা চলে গিয়েছে মহাকাশের দিকে। বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করব।
সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে, এগুলি কোনো সাধারণ বজ্রপাত না। বরং এই বজ্রপাত লাল-নীল রঙের। কখনও কখনও এটি বেগুনি, গোলাপী কিংবা কমলা রঙেরও হয়। এই বিরল বজ্রপাত মেঘ থেকে নিচে না নেমে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ওপরে আয়নোস্ফিয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে যায়। যার ফলে মনে হয় কেউ যেন মেঘ থেকে পেইন্ট ব্রাশ নিয়ে মহাকাশে ছবি আঁকার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি এই অস্বাভাবিক ঘটনাটি নাসার বিজ্ঞানীদের দ্বারা ধরা পড়েছে। মূলত, বায়ুমণ্ডলের ওপরে এই বজ্রপাত হয়। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মহাকাশের দিকে ধাবমান এই বিরল বজ্রপাত সাধারণ বজ্রপাতের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী!
এই বিরল বজ্রপাত সারা বিশ্বে এক বছরে প্রায় ১,০০০ বার দেখা যায়। বিজ্ঞানীদের কাছে এই বজ্রপাত সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য ছিল না। এগুলি আবিষ্কৃত হয়েছে মাত্র ২০ বছর আগে। যেগুলিকে বলা হয় স্প্রাইট (Sprite)। এগুলি অত্যন্ত সংবেদনশীল ভাবে এবং তীব্র বজ্রপাত দ্বারা গঠিত হয়। এইসব বজ্রপাত সাধারণ বজ্রপাতের তুলনায় অত্যন্ত কম দৃশ্যমান হয়। মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ডের জন্যই এগুলিকে দেখা যায়। এই কারণে এগুলি সম্পর্কে স্টাডি করাও খুব কঠিন। যদিও, ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীরা এই স্প্রাইট সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরেছেন।
স্প্রাইট কি: এইসব বজ্রপাতগুলির আচরণের কারণে এদের নামকরণ করা হয়েছে স্প্রাইট। এগুলি হল স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার থেকে নির্গত শক্তি কণা যা তীব্র বজ্রপাতের দ্বারা উৎপন্ন বৈদ্যুতিক প্রবাহ থেকে গঠিত হয়। যখন মেঘের ওপরে আয়নোস্ফিয়ারে বেশি প্রবাহ যায়, তখন এই ধরণের আলো দেখা যায়। সাধারণত এই বজ্রপাত জেলিফিশ বা গাজরের আকারে প্রদর্শিত হয়। এগুলির গড় দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হয় ৪৮ কিমি। যেগুলি সাধারণত তীব্রতার ওপরে নির্ভর করে। পৃথিবী থেকে তাদের দেখা সহজ নয়। উচ্চ উচ্চতায় উড়ন্ত প্লেন এবং মহাকাশ স্টেশন থেকে এগুলি স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: সেমিফাইনালের টিকিট প্রায় কনফার্ম! কার মুখোমুখি হবে ভারত? জেনে নিন বিশ্বকাপের শেষ চারের সূচি
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, স্প্রাইট শুধু বজ্রপাত থেকে জন্মায় না। তারা ট্রানজিয়েন্ট লুমিনাস ইভেন্টস (TLEs) দ্বারাও সৃষ্ট হয়। যেগুলিকে বলা হয় ব্লু জেট। এগুলি হল মহাকাশ থেকে নিচের দিকে আসা নীল আলো। এদিকে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কারণেই যে শুধু লাল রঙের এহেন বজ্রপাত দেখা যায় এমনটা কিন্তু নয়। বরং, এটি বায়ুমণ্ডলযুক্ত সমস্ত গ্রহ এবং নক্ষত্রেও দেখা যায়। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে এইরকম স্প্রাইটের ছবি ১৯৭৯ সালে নাসার ভয়েজার-১ মহাকাশযান দ্বারা তোলা হয়েছিল। যেগুলি ছিল ব্লু জেট।
আরও পড়ুন: বড় পদক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রীর! এবার রাজ্য জুড়ে “বাংলার শাড়ি”-র আউটলেট, কলকাতার কোথায় থাকছে দোকান?
মহাকাশ থেকে স্প্রাইট কবে দেখা গেছে: ১৯৫০-এর দশকে কিছু বিমান দ্বারা স্প্রাইট প্রথম দেখা গিয়েছিল। এরপরে, এগুলি সম্পর্কে অনেক তত্ত্ব দেওয়া হয়। তবে, প্রথম ছবি ১৯৮৯ সালে এসেছিল। এই ছবিটি একটি অ্যাক্সিডেন্টাল ফটো ছিল। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যখন একটি কম আলোর ক্যামেরা পরীক্ষা করছিলেন তখন তাঁরা ঘটনাচক্রে মেঘের ওপরে এই আলোর একটি ছবি পেয়েছিলেন। এরপরে, মহাকাশ স্টেশন থেকে একাধিক মহাকাশচারী এই আলোগুলির ভিডিও তৈরি করেন।