বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) পর্বে কাজের গতি বাড়াতে সরাসরি মাঠে নেমে পড়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। গত ২০ দিনের অগ্রগতি হাতে নিয়ে সোমবার প্রায় আড়াই ঘণ্টার ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক জানান কোথায় ভালো কাজ হয়েছে, আর কোন কোন বিধানসভায় পরিস্থিতি একেবারেই আশানুরূপ নয়। সেই সঙ্গে বুধবার থেকেই জেলায় নামতে হবে, এই নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
খারাপ পারফরম্যান্সে কড়া বার্তা অভিষেকের (Abhishek Banerjee)
বৈঠকের শুরুতেই অভিষেক (Abhishek Banerjee) বুথ লেভেল এজেন্টদের (BLA) কাজের তালিকা পড়ে শোনান। কোন বিধানসভায় কত শতাংশ সক্রিয় BLA, সবই তুলে ধরেন তিনি। অভিষেকের হিসেব অনুযায়ী, আটটি বিধানসভায় কাজ একেবারেই পিছিয়ে।
অভিষেকের (Abhishek Banerjee) হিসেবে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা এলাকা গুলি হল-
- বালিগঞ্জ (৩৪%)
- বনগাঁ দক্ষিণ (৩৩%)
- বেলেঘাটা (৩১%)
- এন্টালি (৩০%)
- মধ্যমগ্রাম (২৯%)
- কলকাতা বন্দর (২২%)
- কাশীপুর-বেলগাছিয়া (২৪%)
- চৌরঙ্গি (২৮%)
এগুলির মধ্যে ছ’টি বিধানসভা কলকাতার।উল্লেখযোগ্যভাবে, এদের কয়েকটি তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের আসনও। যেমন- বাবুল সুপ্রিয়, ফিরহাদ হাকিম, রথীন ঘোষ, অতীন ঘোষ। এরা সকলের বিধানসভার তালিকায় পিছিয়ে।
কোথায় দারুণ কাজ হয়েছে?
অভিষেক (Abhishek Banerjee) জানান, কিছু জায়গায় কাজে ভালো উন্নতি দেখা গেছে। যেমন- হুগলির ধনেখালি এবং হরিপাল তালিকার একদম ওপরের দিকে। ধনেখালিতে ১০০% BLA সক্রিয়তার কথা এদিন জানিয়েছেন অভিষেক।
এ ছাড়া এগিয়ে রয়েছে –
- সিঙ্গুর
- করণদিঘি
- গোয়ালপোখর
- চাকুলিয়া
- রায়গঞ্জ
- রঘুনাথগঞ্জ
- তারকেশ্বর
‘অ্যাপে রিপোর্ট না দিলে নথি আসবে কী করে?’
অনেক BLA কাজ করলেও ‘দিদির দূত’ অ্যাপে তথ্য আপডেট দিচ্ছে না। এদিন এই অভিযোগ স্পষ্ট করে তুলে ধরেন অভিষেক। এই প্রসঙ্গে কড়া বার্তা দিয়ে অভিষেক বলেন, “ওরা ভোট চুরি করতে নেমেছে, আমরা সেটা ধরব। তাই তথ্য আপডেট করতেই হবে।” ডিজিটাল কাজ না পারলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে। তবে তথ্য নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক।
জেলায় পাঠানো হল ১৩ নেতাকে
SIR-এ গতি আনতে বুধবার থেকেই জেলায় পৌঁছতে হবে। সম্প্রতি ১৩ জনকে এমনটাই নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)।
কোন জেলায় কার দায়িত্ব?
- অরূপ বিশ্বাস – হুগলি, দুই বর্ধমান
- স্নেহাশিস চক্রবর্তী – কৃষ্ণনগর, রানাঘাট
- মানস ভুঁইয়া – বাঁকুড়া, পুরুলিয়া
- মলয় ঘটক – পশ্চিম মেদিনীপুর
- সামিরুল ইসলাম – উত্তর দিনাজপুর, মালদহ
- প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় – দক্ষিণ দিনাজপুর
- প্রদীপ মজুমদার – পশ্চিম বর্ধমান
- সুজিত বসু – বনগাঁ, বসিরহাট, রানাঘাট
- বেচারাম মান্না – পূর্ব মেদিনীপুর
- দিলীপ মণ্ডল – কোচবিহার
- চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য – ঝাড়গ্রাম
- ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় – মুর্শিদাবাদ
- উদয়ন গুহ – জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার
- কলকাতার দায়িত্ব – ফিরহাদ হাকিম (ববি)
এদিনের বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে অভিষেক আরও বলেন এখন দলাদলির সময় নয়। এখন একসঙ্গে কাজ করার সময়। বীরভূমের কোন্দল প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “এক বাড়িতে থাকলে মনোমালিন্য হয়, কিন্তু বাড়িটাই না-থাকলে কোথায় যাবেন?” আগামী ১৫০ দিন মাঠে থেকে কাজ করার বার্তা দেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। এই ১৫০ দিনের কাজই আগামী ২০ বছরের ভিত তৈরি করবে, বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাংসদদের বিশেষ দায়িত্ব
১০ জন সাংসদকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। নিদের্শে বলা হয়েছে যে-
- জাতীয় নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিতে হবে
- ২০ দিনে অভিযোগ নিয়ে কমিশন পদক্ষেপ করেনি কেন?উত্তর চাইতে হবে
- বিএলওদের আত্মহত্যার সুইসাইড নোটও দিল্লিতে জমা দিতে হবে
যারা যাবেন তারা হলেন – সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, শতাব্দী রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেন, মহুয়া মৈত্র, প্রকাশচিক বরাইক, শাজদা আহমেদ, মমতাবালা ঠাকুর, সাকেত গোখলে।

আরও পড়ুনঃ রাতভর দপ্তরে ‘আটক’ সিইও! BLO বিক্ষোভে এখনও উত্তপ্ত সিজিও কমপ্লেক্স, কী ঘটেছিল?
কলকাতার জন্য আলাদা নজর
কলকাতায় কাজের ধীর গতিতে বিশেষ অসন্তোষ প্রকাশ করেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। ববি এবং অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। মঙ্গলবার কলকাতার সব বিধায়ক, কাউন্সিলর ও নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন তিনি।এদিন অভিষেক জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি ১৫ দিনে রিপোর্ট চাইছেন। এক দফা তিনি পাঠিয়েছেন। পরের রিপোর্ট যাবে ৬ ডিসেম্বর। এদিন অভিষেক মলয় ঘটক ও মনোজ তিওয়ারি, এই দুজনকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, তাঁরা যথেষ্ট সক্রিয় নন।












