‘ও ঝাঁপ দিয়েছিল, আমরা গরিব বলেই…’, প্রথমবার সর্বসম্মুখে মুখ খুলল যাদবপুর কাণ্ডে ধৃত সৌরভ

বাংলা হান্ট ডেস্ক : যাদবপুর (Jadavpur University) ছাত্রমৃত্যুর (Student Death) ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এমনিতে রাজ্যের এক টুকরো ‘ভিয়েতনামে’ আন্দোলন যেন সর্বদা সচল। আর সেখানেই তদন্ত করতে গিয়ে উঠে আসছে একটার পর একটা বিষ্ফোরক তথ্য। উঠে এসেছে র‌্যাগিং তত্বও। মূলত এই বিষয়টির উপরেই বেশি জোর দিচ্ছে পুলিশ। তবে এবার কার্যত সেই র‌্যাগিংয়ের ঘটনাকেই নাকচ করে দিলেন অভিযুক্তদের একজন। ভিকটিম কার্ড খেলতে গিয়ে তিনি বললেন, তারা গরিব বলেই নাকি ইচ্ছাকৃত ফাঁসানো হচ্ছে তাদের। মৃত ছাত্র নিজেই হস্টেলের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলে দাবি তার।

এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দফায় দফায় চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। আর সেই জিজ্ঞাসাবাদ থেকেই উঠে আসছে একটার পর একটা সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যাচ্ছে র‌্যাগিং, নেশা, বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে নাকি চলত দেদার  ‘তোলাবাজি’ও। হস্টেলে আসা নতুন ছাত্রদের থেকে নাকি টাকাও তুলতেন সিনিয়রেরা!  নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠনের নামও উঠে এসেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দেহব্যবসার মত ঘৃণ্য কাজের কথাও উঠে আসছে তদন্তে। ক্ষণে ক্ষণে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ালেও ক্যাম্পাস চত্বরে যে গণতন্ত্রের ন্যূনতম ছাপও নেই সেকথা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে পুলিশি তদন্তে।

এসবের মাঝেই এবার সবার সামনে মুখ খুললেন মুল অভিযুক্ত সৌরভ চৌধুরী। প্রিজন ভ্যান থেকে সৌরভ বলেন, ‘‘আমরা গরিব বলে ফাঁসানো হচ্ছে। কোনও র‌্যাগিং হয়নি। পুলিশ তদন্ত করবে সেটা। বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়েছে ওই ছাত্র। এটুকুই আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে। মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ মিথ্যা। জিবি কী কারণে হয়েছে, আমি জানি না। আমরা কোনও অপরাধী নই। আমরা ন্যায্য বিচার চাই।’’

আরও পড়ুন : যোগীর পর এবার ভগবানের শরণে রজনীকান্ত! হনুমানগড়িতে দর্শন সেরে হাজির অযোধ্যায় রামের দরবারে

উল্লেখ্য, রবিবার আলিপুর আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে করে কয়েক জন ধৃতকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই সময়ই এই কথা বলেন যাদবপুরের এই প্রাক্তনী। যদিও এই ধৃত পড়ুয়ার কথা বিশ্বাস করতে নারাজ সাধারণ মানুষ। এই প্রসঙ্গে সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষালও বলেছিলেন, ‘‘একটা অত্যাচারের গল্প পাচ্ছি।’’ তাছাড়া একটা হাসিখুশি ছেলে কী কারণেই বা আত্মহত্যা করতে যাবে? এরকমই প্রশ্ন তুলছেন আম জনতাও।

আরও পড়ুন : ‘বাবা কষ্ট করছে, আর ছেলে শহরে এসে অপদার্থ তৈরি হয়েছে’, যাদবপুর কাণ্ডে বিস্ফোরক রূপা গাঙ্গুলি

গত ৯ অগাস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টলের এ-২ ব্লকে তিন তলার বারান্দা থেকে এক ছাত্র পড়ে যান বলে দাবি। উলঙ্গ এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এক বেসরকারি হাসপাতালে। ১০ অগস্ট ভোরে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। র‌্যাগিংয়ের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। তদন্ত করতে গিয়ে প্রাক্তনী এবং পড়ুয়া মিলিয়ে মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন : ক্যান্সার কেড়ে নিল ভাইরাল কুকুর ‘চিমস’র প্রাণ! চোখে জল নেটিজনদের

ju hostel

যারমধ্যে ১২ জন যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ধৃত। এছাড়াও ঘটনার দিন হস্টেলের গেটে পুলিশকে বাধা দেওয়ার জন্য একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত ঐ পড়ুয়ার নাম জয়দীপ ঘোষ। তারপর থেকেই দফায় দফায় চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তরা ক্রমাগত নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করে চলেছে। তাছাড়া তাদের বয়ানেও রয়েছে অসঙ্গতি। এখন তারা র‌্যাগিং তত্বকে অস্বীকার করতে চাইলেও হস্টেল থেকে উদ্ধার হওয়া নীল রঙের হাফপ্যান্ট এবং গেঞ্জি ও ছাত্রের বিবস্ত্র দেহ কার্যত র‌্যাগিং তত্বকেই আরো জোরালো করছে।


Moumita Mondal
Moumita Mondal

মৌমিতা মণ্ডল, গ্র্যাজুয়েশনের পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। বিগত ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত। প্রায় ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর