বাংলা হান্ট ডেস্ক : শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির নিরিখে বাংলা তে বরাবরই সমৃদ্ধ ছিল তার প্রমাণ মিলেছে বারংবার। এই বাংলা যেমন দিয়েছে কবিগুরুর মত সাহিত্যিকদের তেমনই দিয়েছে ক্ষুদিরামের মত বিপ্লবীদের। সিনেমা জগতেও বাংলার অবদান কম কিছু নয়। এরকমই বাংলার এক প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা হলেন ভিক্টর ব্যানার্জি (Victor Banerjee)। টলি-বলি-হলি__সমস্ত জায়গাতেই নিজের ছাপ রেখে গেছেন অভিনেতা। ‘লাঠি’র মত কেতাদুরস্ত কমার্শিয়াল মুভি থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথের চরিত্র__সবেতেই তিনি পিকচার পারফেক্ট।
তো এহেন অভিনেতাই একটা লম্বা সময় ধরে বাংলা বিমুখ হয়েছিলেন। তবে সম্প্রতি তিনি আবার ফিরেছেন ‘রক্তবীজ’র হাত ধরে। তারপর থেকেই গোটা বাংলা জুড়ে তাঁর চর্চা। উঠে আসছে অভিনেতার পুরোদিনের সব গল্প। এই যেমন সেদিনই এক সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে বের করে নিয়ে এলেন একাধিক সব তথ্য। জানালেন, কীভাবে মিথ্যা বলে ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ছবির চরিত্রটি তিনি বাগিয়ে নিয়েছিলেন। কেনই বা আর প্রিয় মাণিকদার সাথে কাজ করে ওঠা হয়নি সেটারও উত্তর দিলেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা।
এইদিন এক সাক্ষাৎকারে ভিক্টর জানান, তিনি তার কাজের প্রতি ১০০ শতাংশ সৎ থাকতে পছন্দ করেন। তখনই সঞ্চালক তাকে প্রশ্ন করে বসেন, তবে যে সত্যজিৎ রায়কে মিথ্যা বলে চরিত্র বাগিয়ে নিয়েছিলেন, তার বেলা? অভিনেতা ভ্রু নাচিয়ে বলেন, ‘সে এক কাণ্ড বটে’। আসলে ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’তে কাস্টিং-র পূর্বে সত্যজিৎ তাকে জিজ্ঞেস করেন যে, তিনি উর্দু জানেন কি না? অভিনেতা ‘হ্যাঁ’ বলে রোল বাগিয়ে নিলেও আসলে তিনি সেটা জানতেন না। পরে সেটা ধরাও পড়ে যান অবশ্য।
আরও পড়ুন :
এইদিন ভিক্টর বলেন, ‘মানিকদাকে খুব লজ্জিত মনে হয়েছিল। গলা নামিয়ে বলেছিলেন, বললে যে জান!’ অভিনেতা আরও বলেন, ‘ক্যামেরা টেস্ট হল, লেটার মার্কস পেয়ে উতরে গেলাম। স্ক্রিপ্টের উর্দু বলতে তো পারছি, কিন্তু অভিনয় কি করতে পারব? মানিকদা চিন্তায় পড়ে গেলেন। আর এই বিষয়টাকে ইস্যু করে ইউনিটের একাংশ পিছনে লাগতে শুরু করল। প্রথম দিনের শ্যুটিং। ১২-১৪ লাইনের উর্দু ডায়লগ বলতে হবে। মানিকদার মুখটা দেখে বুঝতে পারছি চাপে আছেন। অন্যদিকে, পিছনে লাগা লবি আমার ফেলিওরের অপেক্ষায়। রোল ক্যামেরা অ্যাকশন… কাট বলার সঙ্গে সঙ্গে মানিকদা হো হো করে হেসে উঠলেন। বিষয়টা বুঝে আমিও জোরে হাসতে থাকলাম। মানিকদাকে জেতাতে পেরেছিলাম সেদিন, মুহূর্তটা কখনও ভুলব না।’
আরও পড়ুন : ঠোঁটে সিগার, হাতে শ্যাম্পেনের গ্লাস! শশী থারুরের সঙ্গে ছবি ভাইরাল হতেই রেগে অগ্নিশর্মা মহুয়া
এরপরেই অভিনেতাকে জিজ্ঞেস করা হয় ‘ঘরে বাইরে’ নিয়ে। কোনো রাখঢাক ছাড়াই ভিক্টর বলেন, ‘একটা সত্যি কথা বলি, আমি সন্দীপ আর সৌমিত্র নিখিলেশ করলে ছবিটা হিট করে যেত। সন্দীপের দুষ্টুমিটাই সৌমিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। ওই চরিত্রটা পেলে একেবারে শুইয়ে দিতাম। এটা আমার আফশোস।’ তার স্পষ্ট কথার ঘেরাটোপে থেকে বাদ যাননি খোদ উত্তম কুমারও। একদা মহানায়কও নাকি বিপাকে পড়েছিলেন এই অভিনেতার জন্য।
আরও পড়ুন : টিভির পর্দায় মহাপুরুষদের অপমান! ‘নিম ফুলের মধু’র নয়া প্রোমো দেখে ক্ষুব্ধ দর্শক
জানা গেল, ‘দুই পৃথিবী’ ছবির একটা দৃশ্যের জন্য পরিচালক ভিক্টরকে উত্তম কুমারের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন। তাঁর সেটা অযৌক্তিক মনে হওয়ায় তিনি তা করেননি। পরে অন্য একটা সিনে তিনি নিজে থেকেই মহানায়কের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছিলেন। সেই সময় পরিচালক তাকে কথা শোনালে তিনি সাফ বলে দেন, ‘আমি অভিনয় করতে এসেছি, কাউকে সন্তুষ্ট করতে নয়।’ এছাড়াও আরও একটা সমস্যা ছিল উত্তম কুমারের সাথে। আসলে ভিক্টর ব্যানার্জি কল টাইম মেনে সেটে পৌঁছালেও উত্তম বাবু পৌঁছাতেন দেরিতে। এটা নিয়েই ভিক্টর রাগারাগি করলে মহানায়ক নাকি তাকে চুপিচুপি ডেকে বলেন, ‘আমি না অত সকালে উঠতে পারি না। তুমি কল টাইম মেনে সাত সকালে আর এস না।’