বেড়াতে গিয়ে মিলল দুর্দান্ত আইডিয়া! এই ফলই বদলাল অদ্বৈতর জীবন, এখন সামলাচ্ছেন ১.৫ কোটির ব্যবসা

Published on:

Published on:

Advaita's Success Story will surprise you.
Follow

বাংলাহান্ট ডেস্ক: মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের বাসিন্দা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অদ্বৈত কুলকর্ণির জীবনে সাফল্য (Success Story) এনে দিয়েছিল একটি সাধারণ ট্রিপ। ২০১৭ সালে তিনি ছুটি কাটাতে ত্রিপুরা গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার বিশাল আনারসের বাগান দেখে এতটাই মুগ্ধ হন যে এই ফলকেন্দ্রিক সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করেন। ২০১৭ থেকে ২০২০—এই তিন বছরে তিনি ত্রিপুরার বহু গ্রামে ঘুরে দেখেন আনারস চাষের প্রকৃত চিত্র। তিনি উপলব্ধি করেন যে ত্রিপুরার আনারস শুধু রসাল ও সস্তাই নয়, তার উৎপাদনও দেশের অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি। পর্যাপ্ত পরিবহন ও সংরক্ষণব্যবস্থা না থাকায় প্রচুর ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে ‘কুইন’ প্রজাতির আনারস, যা ২০১৫ সালে জিআই ট্যাগ পায় এবং ত্রিপুরার সরকারি ফল হিসেবেও স্বীকৃত।

বেড়াতে গিয়েই নিজের সাফল্যের কাহিনি (Success Story) লিখলেন অদ্বৈত:

এই সম্ভাবনা মাথায় রেখে, বাবার উৎসাহ ও এক বন্ধুর প্রযুক্তিগত পরামর্শে অদ্বৈত সিদ্ধান্ত নেন ত্রিপুরায় ফুড প্রসেসিং ইউনিট স্থাপনের। ২০২১ সালে ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের অধীনে কুমারঘাটে একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনিট কিনে তিনি নতুন করে প্রাণ ফেরান। স্থানীয় ডারলং জনজাতির ‘ফলের দেবী’ নামে পরিচিত ‘ননসেই’ শব্দকে সামনে রেখে ইউনিটটির নাম দেন ‘ননসেই ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবলস প্রোডাক্টস ইন্ডাস্ট্রি’। কুমারঘাট ত্রিপুরার সবচেয়ে বড় আনারস উৎপাদনকারী অঞ্চল হলেও সেখানে প্রসেসিং ইউনিটের অভাব ছিল দীর্ঘদিনের সমস্যা। অদ্বৈতের উদ্যোগ সেই শূন্যস্থান পূরণ করে।

আরও পড়ুন: বড় পদক্ষেপ কেন্দ্রের! দেশের যুব সমাজের সাহায্যার্থে বিনামূল্যে শুরু হচ্ছে AI কোর্স, কীভাবে করবেন আবেদন?

তিনি স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪,০০০ আধপাকা আনারস কেনা শুরু করেন, যা ৬০ জন কৃষকের জন্য স্থায়ী বিক্রির সুযোগ তৈরি করে। এদের মধ্যে ৯০ শতাংশই পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের। ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে নিয়মিত এই কেনাকাটা কৃষকদের প্রধান আয়ের উৎসে পরিণত হয়। ইউনিটে ৩০ জন স্থানীয় মহিলা কর্মী আনারস পরিষ্কার, স্লাইসিং ও চিনি সিরাপ ও সাইট্রিক অ্যাসিড দিয়ে ক্যানিংয়ের কাজ করেন। এই ডিব্বাবন্দি অনানাস দুই বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। মাসে ৭০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ ক্যান উৎপাদন হয় এবং দিল্লি, কলকাতা, গুয়াহাটি সহ বড় শহরগুলিতে সরবরাহ করা হয়।

মাত্র তিন বছরের মধ্যে অদ্বৈতের সংস্থা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১.৫ কোটি টাকার বার্ষিক টার্নওভার ছুঁয়েছে। এবছর সেই অঙ্ক ৩ কোটি পৌঁছবে বলে আশা। জুস তৈরির উপযোগী ‘কুইন’ ও ক্যানিংয়ের ‘কেভ’—এই দুই প্রজাতির আনারস সঠিকভাবে ব্যবহারের ফলেই এই সাফল্য। যদিও ত্রিপুরায় ব্যবসা করা সহজ নয়। দূরত্ব, পরিবহন খরচ, গুয়াহাটি থেকে কাঁচামাল আনা বা দিল্লি থেকে টিন কন্টেনার সংগ্রহ—সবই বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও আগামী কয়েক বছরে তিনি বার্ষিক আয় ৮-১০ কোটি টাকায় উন্নীত করার লক্ষ্য স্থির করেছেন। এর পাশাপাশি ডিহাইড্রেটেড ফল ও সবজি এবং রেডি-টু-ইট খাদ্য বাজারেও প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Adwait's Success Story will surprise you.

আরও পড়ুন:বিশ্ববিদ্যালয় নাকি জঙ্গি তৈরির প্রতিষ্ঠান? দিল্লি বিস্ফোরণের পরেই আল-ফালাহ ছাড়ছেন অধ্যাপক-পড়ুয়ারা

শুধু আনারসই নয়, অদ্বৈত ত্রিপুরার কৃষিক্ষেত্রে নতুন দিগন্তও খুলে দিয়েছেন। মহারাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে তিনি ত্রিপুরায় ভুট্টা চাষ শুরু করান। রাজ্য কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বর্তমানে ৩০-৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে, যার ৭০ শতাংশই জনজাতি কৃষকদের হাতে। ধান কাটার পর অল্প সময়ে ভুট্টা ফলায় কৃষকরা দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন। ননসেই এখন ডিব্বাবন্দি বেবিকর্নও উৎপাদন করছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ সরবরাহ ও উৎপাদন কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। এইভাবে অদ্বৈত কুলকর্ণি শুধু একটি সফল ব্যবসা গড়ে তোলেননি, বরং ত্রিপুরার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা, স্থায়িত্ব ও উদ্ভাবনের পথ খুলে দিয়েছেন।