বাংলা হান্ট ডেস্ক : আর জি কর কাণ্ডে কাঞ্চন মল্লিকের (Kanchan Mullick) মন্তব্য তৈরী করেছে নতুন বিতর্ক। প্রসঙ্গত আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ এখন আর শুধুমাত্র রাজ্যের জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। তা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বস্তরে সারা দেশে। ইতিমধ্যেই তিলোত্তমার মৃত্যু হয়েছে প্রায় এক মাস হতে চলল। এখনও বিচার অধরা। এরই মধ্যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শাসকদলের অবস্থানকে নিয়ে নানা স্তরে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। এসবের মধ্যেই তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক (Kanchan Mullick) জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে, ‘বেতন নেবেন না? বোনাস নেবেন না?’ মন্তব্য করে তৈরি করেছেন নতুন বিতর্ক।
কাঞ্চন মল্লিকের (Kanchan Mullick) কথায় পুরস্কার, ফুঁসছেন তারকারা
পাশাপাশি নাট্যকর্মী তথা অভিনেতাদের উদ্দেশ্যেও সরকারি পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন কাঞ্চন (Kanchan Mullick)। এককালের লড়াকু কাঞ্চন মল্লিকের (Kanchan Mullick) এই মন্তব্য শুনে কার্যত স্তম্বিত গোটা টলিউড (Tollywood)। ইতি মধ্যেই কাঞ্চনকে (Kanchan Mullick) কোণঠাসা করেছেন রাজ্যের মানুষ থেকে শুরু করে তাঁর সহকর্মীরা। প্রতিবাদে একে একে সরকারি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায়, চন্দন সেন এবং বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারা। এবার এই তালিকায় যোগ হতে চলেছে আরো এক নাম। তিনি হলেন অভিনেতা তথা নাট্যকর্মী সুপ্রিয় দত্ত (Supriyo Dutta)। ছোটপর্দার এই অভিনেতাকে বেশিরভাগ সময়ে খলনায়কের চরিত্রে দেখা যায়।
২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছিল অভিনেতাকে। তিন বছর পর এদিন প্রচন্ড অভিমানে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে ফিরিয়ে দিতে চাইছেন পুরস্কার। এদিন রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ জানিয়ে অভিনেতা লিখেছেন, ‘কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের নারকীয় ঘটনার পর শাসকের ভূমিকা আমায় স্তম্ভিত করেছে। শাসক এবং তার পদলেহনকারী পুলিশ-প্রশাসনের প্রতিটি পদক্ষেপ প্রমাণ করেছে সত্যকে আড়াল করতে তারা কতটা মরিয়া। এমতাবস্থায় এক কন্যা সন্তানের পিতা হিসেবে আমি ভীত, সন্ত্রস্ত। পাশাপাশি আমার বন্ধু বর্তমানে শাসকের প্রতিনিধি কাঞ্চন মল্লিকের (Kanchan Mullick) কথায় বুঝলাম, শাসক আসলে পুরস্কার এবং সম্মানের বিনিময়ে মোসায়েব খরিদ করে। শাসক চায় একদল অমেরুদণ্ডী চাটুকারের ব্যাটেলিয়ন। কাঞ্চনবাবুর এই বিবৃতি আসলে সরকারেরই ঘোষিত (বা অঘোষিত) আদেশনামা– হয় সত্য নয় সম্মান। এমতাবস্থায় আমি সত্যের পথই বেছে নিলাম।’
প্রসঙ্গত সুপ্রিয়বাবু নিজে একজন কন্যা সন্তানের বাবা তাই আরজিকরের ঘটনায় তিনি রীতিমতো ভীত-সন্ত্রস্ত। এদিন কাঞ্চন মল্লিকের বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে এককালের সহকর্মী তথা বন্ধু সুপ্রিয় দত্ত বলেছেন, ‘একজন বিধায়ক বললেন, ‘যাঁরা যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁরা ফেরত দেবেন তো?’ এমনিতেই আমি খুব যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছি। খালি মনে হচ্ছে, এটা বোধহয় আমার কাছে রাখা ঠিক নয়। খুব গ্লানিতে ভুগছি। সেই কারণেই এটা আমি ফেরত দিতে চাই। অভিনেতা হিসেবে আমার মনে হয় এটা ফেরত দিয়ে দেওয়াই উচিত। একটা নৃশংস হত্যা, মানুষ পথে নেমেছেন। এমন নয় যে আমায় এটা খুব অসম্মান করে দেওয়া হয়েছিল, সম্মান দিয়েই পুরস্কৃত করা হয়েছিল।’
আরও পড়ুন : টাকা যেন হাতের ময়লা! বছরে কত কোটি কর দেন শাহরুখ? কেনা যাবে ১৫০-টিরও বেশি বাড়ি
প্রসঙ্গত নিজের করা বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ইতিমধ্যেই ক্ষমা চেয়েছেন কাঞ্চন মল্লিক কিন্তু আম জনতা থেকে সহকর্মী কারওরই যেন রাগ কমছে না কাঞ্চন মল্লিকের ওপর থেকে। এবার ২০১৮ সালের ঘটে যাওয়া এমনই এক ঘটনার কথা জানিয়ে ফেসবুক ওয়ালে কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন অভিনেতা স্ক্রিপ্ট রাইটার দেবপ্রতীম দাশগুপ্ত। শিক্ষক দিবসে নিজের স্বর্গীয় পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এদিন তিনি লিখেছেন, ‘একটা কথা বলা দরকার, ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ টেলি একাডেমি থেকে সেরা চিত্রনাট্যকার সম্মান পাই আমি। সেই রাতে কাঞ্চন আমাকে ফোন করে বলে ওই মহিলার সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে পুরস্কার নিলি? Ipta করা তোর বাবা ওপরে গিয়ে খাবি খাচ্ছে আজ, ছিঃ, ওই বাপের এই ছেলে!’
সেদিন বন্ধু ভেবে কাঞ্চনের মন্তব্য রেকর্ড করেননি অভিনেতা। তাই আজ তাঁর কাছে কোনো প্রমান নেই। এরপরেই এদিন দেবপ্রতীম বাবুর সংযোজন, ‘এরপর তিনি বিধায়ক হলেন।আজ উনি বুঝিয়ে দিলেন পুরস্কার মানে কি, সম্মান কথার আসল মানে।সেদিনই বলতে পারতাম কিন্তু বিশ্বাস করুন এই মুহূর্তে এক লক্ষ টাকা আমার কাছে নেই। থাকলে ওই বক্তব্য শুনেই ফিরিয়ে দিতাম।আজ বলছি : দরকার হয় ধার করবো।কিন্তু আমি সেই সম্মান (!) ফিরিয়ে দেবো।’