নতুন নোটে আবারও ‘ভারতের ভূখণ্ড’! বছর পাঁচেক আগেকার বিতর্ক ফের উস্কে দিল নেপাল

Published on:

Published on:

Follow

বাংলাহান্ট ডেস্ক: নেপাল (Nepal) আবারও সীমান্ত বিতর্ক উস্কে দিল। পাঁচ বছর আগে প্রকাশ করা বিতর্কিত মানচিত্র ছাপানো নতুন ব্যাঙ্কনোট ফের বাজারে আনল নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। বৃহস্পতিবার নেপাল রাষ্ট্র ব্যাঙ্ক ১০০ নেপালি রুপির যে নতুন নোট প্রকাশ করেছে, তাতে স্পষ্ট ভাবে দেখানো হয়েছে ভারতের কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরা নেপালের ভূখণ্ডের অংশ। ২০২০ সালে কেপি শর্মা ওলির সরকারের সময়ে প্রথম এই মানচিত্র তৈরি করে নেপাল, যা পরে পার্লামেন্টও অনুমোদন দেয়। গত বছর ব্যাঙ্কনোটে সেই মানচিত্র ছাপানো নিয়েও বিতর্ক ছড়িয়েছিল। ফের সেই একই বিতর্কিত নোট প্রকাশ হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।

নেপালের (Nepal) টাকায় ভারতের মানচিত্র নিয়ে ফের বিতর্ক

ভারত শুরু থেকেই নেপালের (Nepal) এই পদক্ষেপে কড়া আপত্তি জানিয়েছে। দিল্লির বক্তব্য, কাঠমান্ডু একতরফাভাবে মানচিত্র বদল করে বাস্তব পরিস্থিতি পাল্টাতে পারবে না। গত বছর ব্যাঙ্কনোট বিতর্কের সময়ও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, নেপালের এই সিদ্ধান্ত কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি স্পষ্ট বলেন, রাজনৈতিক কারণে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যদিও নেপালের তরফে দাবি করা হয়, ১০০ রুপির নোটে আগের মতোই মানচিত্র থাকবে। নেপাল রাষ্ট্র ব্যাঙ্কের মুখপাত্র জানান, নতুন নোটে সই রয়েছে প্রাক্তন গভর্নর মহাপ্রসাদ অধিকারীর এবং নেপালি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সাল উল্লেখ করা হয়েছে ২০৮১ (খ্রিস্টাব্দ ২০২৪)।

আরও পড়ুন: কোচিং ছাড়াই পরপর চারবার UPSC জয়! অমৃত জৈনের ‘ম্যাজিকাল’ সাফল্যের গল্প অবাক করবে আপনাকেও

ওলি সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলেও মানচিত্র বিতর্কে কোনও পরিবর্তন হয়নি। কাঠমান্ডুর অবস্থান এখনও একই। এদিকে, নেপালের (Nepal) অভিযোগ— ব্রিটিশ আমলে ১৮১৬ সালের সুগৌলির সন্ধি অনুসারে কালী নদী ভারত-নেপাল সীমান্ত নির্ধারণ করে, কিন্তু নদীর উৎসস্থল নিয়ে মতভেদ থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। নেপালের দাবি, লিম্পিয়াধুরা থেকেই কালী নদীর উৎপত্তি, তাই লিপুলেখ–লিম্পিয়াধুরা অঞ্চল তাদেরই। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই অংশকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে এবং সরকারি মানচিত্রেও তাই দেখানো হয়েছে। চলতি বছরের অগস্টেও নেপাল সরকার এই অঞ্চলকে নিজেদের ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ হিসেবে উল্লেখ করে ভারতকে রাস্তা নির্মাণ বা সীমান্তবাণিজ্য সম্প্রসারণ না-করার অনুরোধ জানিয়েছিল।

ভারতের পাল্টা দাবি একেবারে স্পষ্ট— কালী নদীর উৎসস্থান কালাপানির একটি প্রস্রবণ, যা উত্তরাখণ্ডের অন্তর্গত। সেই হিসেবে পুরো অঞ্চলই ভারতের সীমান্তের মধ্যে পড়ে। নেপালের (Nepal) দাবির ভিত্তি ঐতিহাসিকভাবে দুর্বল বলে মনে করছে দিল্লি। উপরন্তু, এই বিতর্কিত মানচিত্র বারবার ব্যবহার করে নেপাল রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। ভারতের মতে, নেপালের একতরফা কোনও পদক্ষেপই আন্তর্জাতিক সীমারেখা বদলাতে পারবে না।

Again debate over Indian map on Nepal currency.

আরও পড়ুন: সত্যিই কি জেলে ‘খুন’ হয়েছেন ইমরান? পাক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে কি বলছে আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ?

নতুন ব্যাঙ্কনোটে বিতর্কিত মানচিত্র প্রকাশের পর দুই দেশের সম্পর্ক ঘিরে উদ্বেগ আরও বাড়ছে। ভারত আবারও এ বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। একই সঙ্গে, সীমান্ত বিরোধ সমাধানে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে আসছে। এই ঘটনায় বহু বছর পুরনো সীমান্ত বিবাদ ফের নতুন করে সামনে এল, আর তাতে উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর অস্থিরতার ছায়া পড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।