বাংলাহান্ট ডেস্ক: ফের পাক অধিকৃত কাশ্মীর (Pakistan occupied Kashmir)-এ অশান্তির আগুন জ্বলছে। মাত্র এক মাসের মধ্যেই দ্বিতীয়বার রাস্তায় নামলেন সাধারণ মানুষ। তবে এবার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে নতুন প্রজন্ম— জেনারেশন জেড, অর্থাৎ তরুণ ছাত্রছাত্রীরা। শেহবাজ শরিফ সরকারের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে মুজাফফরাবাদের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যেখানে ছাত্ররা বাড়তে থাকা ফি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বল পরিকাঠামো ও সুবিধার অভাবের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন।
ফের বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে পাক অধিকৃত কাশ্মীর (Pakistan occupied Kashmir)
প্রথমদিকে পিওকেতে (Pakistan occupied Kashmir) এই বিক্ষোভ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবেই হচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন এক অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারী ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিতে এক ছাত্র আহত হয়। ঘটনাস্থলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে, যেখানে দেখা যাচ্ছে পুলিশ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও আতঙ্কিত ছাত্ররা প্রাণ বাঁচাতে চারদিকে ছুটছে। ওই ঘটনার পর উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়— ক্ষুব্ধ ছাত্ররা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করে এবং সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: একটি চুক্তিতেই রকেটের গতি! শেয়ার বাজারে ৫০ টাকারও কম দামের এই স্টকে ১৫ শতাংশের উত্থান
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এই বিক্ষোভ এখন সারা পিওকে (Pakistan occupied Kashmir)-জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আন্দোলনে ইন্টারমিডিয়েট স্তরের ছাত্রছাত্রীরাও যোগ দিয়েছে। তাদের মূল দাবি নতুন ই- মার্কিং বা ডিজিটাল মূল্যায়ন পদ্ধতি বাতিল করা। সম্প্রতি এই নতুন ব্যবস্থা মেট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরে চালু করা হয়েছে, কিন্তু তাতে ফলাফলের নানা গরমিল দেখা দিয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর পিওকেতে (Pakistan occupied Kashmir) প্রকাশিত হয় ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের ফলাফল, যার থেকেই ক্ষোভ ছড়ায় ছাত্রদের মধ্যে। বহু ছাত্র অভিযোগ করেছেন, যেসব বিষয়ে তারা পরীক্ষা দেননি, সেই বিষয়েও তাঁদের নম্বর দেওয়া হয়েছে, আবার অনেক মেধাবী ছাত্র অপ্রত্যাশিতভাবে কম নম্বর পেয়েছেন। এই অনিয়মের তদন্তে মীরপুর শিক্ষা বোর্ড একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি, ছাত্ররা দাবি তুলেছে পুনর্মূল্যায়নের (রিচেকিং) ফি মওকুফ করার। বর্তমানে প্রতি বিষয়ের রিচেকিং ফি ১,৫০০ টাকা— অর্থাৎ সাতটি বিষয়ের জন্য মোট ১০,৫০০ টাকা। সাধারণ পরিবার থেকে আসা ছাত্রদের পক্ষে এই ফি দেওয়া সম্ভব নয় বলে তাদের অভিযোগ।
এই বিক্ষোভ কিন্তু পিওকে (Pakistan occupied Kashmir)-তে প্রথম নয়। মাত্র এক মাস আগেই একই অঞ্চলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল জনতা, যেখানে পুলিশের গুলিতে ১২ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়। সেই সময়েও স্থানীয় মানুষ সরকারকে ৩০ দফা দাবি জানিয়েছিল— যার মধ্যে ছিল কর কমানো, আটা ও বিদ্যুতের ওপর ভর্তুকি, এবং অসমাপ্ত উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুত শেষ করা। কিন্তু সরকার সে সময়ও কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি।

এইবারের আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ নতুন মাত্রা এনেছে পিওকেতে (Pakistan occupied Kashmir)। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয়, বরং সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার প্রতিবাদ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। অনেকে এটিকে নেপাল ও বাংলাদেশের তরুণদের সাম্প্রতিক গণআন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে তরুণ প্রজন্মই পরিবর্তনের দাবিতে নেতৃত্ব নিয়েছিল।
পিওকে (Pakistan occupied Kashmir)-র এই ছাত্র আন্দোলন এখন পাকিস্তান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কট, অন্যদিকে তরুণদের ক্ষোভ— এই দুই মিলে শেহবাজ সরকারের মাথাব্যথা বাড়ছে। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে, পিওকে-র এই অস্থিরতা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও গভীরভাবে নাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।













