বাংলা হান্ট ডেস্ক : লোকসভা নির্বাচনের ঠিক পূর্বে সবথেকে বড় চাল চেলেছে বিজেপি। যে CAA নিয়ে এতদিন এত চর্চা ছিল সেই সিএএ (Citizenship Amendment Act) এখন বাস্তব। বিরোধীদের লাখো বিরোধও আটকাতে পারেনি নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন। পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের অমুসলিম উদ্বাস্তুরা (হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি, খ্রিস্টান) এই আইনের আওতায় ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারবেন। তবে এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মও থাকবে। CAA নিয়ে ক্রমবর্ধমান প্রশ্ন এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর পূর্বে দেখে নিন সেই ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
1. কারা নাগরিকত্ব পাবে?
এখানে বলে রাখা ভালো, যারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পূর্বে ভারতে এসেছেন তারা এই নাগরিকত্ব পাবেন। তবে তার জন্য তাদের ভারতে প্রবেশ করার তারিখ, ভারতে প্রবেশ করার জন্য ভিসা বা ইমিগ্রেশন স্ট্যাম্প ইত্যাদি প্রদান করতে হবে।
2. কিভাবে CAA সিস্টেম কাজ করবে?
এই গোটা প্রক্রিয়াটি হবে অনলাইনে। অনলাইনেই আবেদন করতে হবে। প্রথমে আবেদনটি যাবে জেলা কমিটির কাছে। তারপর তারা এটি ক্ষমতাপ্রাপ্ত কমিটির কাছে পাঠাবে। এটি মোট ৮ সদস্যের একটি বেঞ্চ। আইবি, ফরেন, রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস, পোস্ট অফিস এবং স্টেট ইনফরমেশন অফিসাররা থাকবেন এই কমিটিতে।
3. CAA-এর অধীনে নাগরিকত্বের জন্য কী কী নথির প্রয়োজন?
ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে অনলাইন ফর্মে তফসিল-1A-এর অধীনে ৯ ধরনের নথি চাওয়া হয়েছে। যেখানে তফসিল-1বি-এর অধীনে ২০ ধরনের নথি এবং তফসিল-1C-এর অধীনে হলফনামা দিতে হবে। এই তিন দেশের উদ্বাস্তু অমুসলিমদের পাসপোর্ট, জন্ম সনদ, শিক্ষাগত সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখাতে হবে। এছাড়াও আবেদনকারীরা ভারত সরকার কর্তৃক জারি করা আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেশন কার্ড, জন্ম শংসাপত্র, প্যান কার্ড, জমির নথি, বিদ্যুৎ এবং জলের বিল, বিবাহের শংসাপত্র ইত্যাদি দেখিয়ে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন।
4. কোন দলিল না থাকলে কি করবেন?
বলে রাখি, এক্ষেত্রে কোনও দলিল না থাকলেও সমস্যা নেই। কাগজপত্র না থাকলে তার যথাযথ কারণ জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীদের সাথে কথা বলতে পারেন।
5. ফর্ম পূরণ করতে হবে কি?
আবেদন ফর্মে আবেদনকারীকে তার বাবা মা এবং মহিলা হলে স্বামীর নাম উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও তিনি কোন দেশ থেকে এসেছেন, কতদিন ধরে ভারতে বসবাস করছেন, ভারতে কী করছেন এবং কোন ধর্মের অনুসারী এই সব তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
6. বিবাহিত এবং অবিবাহিতদের জন্য কি আলাদা ফর্ম আছে?
হ্যাঁ, ওয়েব পোর্টালে এর জন্য আলাদা ফর্ম রয়েছে। আপনি যদি ভারতে আসার পরে কোনও ভারতীয়কে বিয়ে করেন তবে সে সম্পর্কেও তথ্য দিতে হবে। শিশুদের জন্যও আলাদা ফর্মও দেওয়া হয়েছে।
7. অপরাধমূলক রেকর্ডের ক্ষেত্রে কী হবে?
এখানে বলে রাখা ভালো, কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড থাকলে তার তথ্য দিতে হবে। সরকার যদি মনে করে যে এই ধরনের ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া দেশের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে, তাহলে তার ফর্ম বাতিল করার অধিকার রয়েছে সরকারের।
8. কারো নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া যাবে কি?
না, কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কোনো বিধান নেই। অর্থাৎ CAA-র আওতায় কারও নাগরিকত্ব বাতিল হবেনা।
9. নাগরিকত্ব শংসাপত্র কিভাবে পেতে হয়?
ফর্মে সমস্ত তথ্য দেওয়ার পরে, এর সত্যতা নিশ্চিত করে স্বাক্ষর করতে হবে। কোন মিথ্যা বা জালিয়াতির প্রমাণ পেলে ফর্ম বাতিল করা হবে। এরপর এই সমস্ত তথ্য যাচাই করে ডিজিটাল সার্টিফিকেট দেবে কেন্দ্র। আবেদনকারী যদি হার্ড কপি চান, তাও দেওয়া হবে।
10. নাগরিকত্বের জন্য কি কোন শর্ত থাকবে?
ভারতীয় নাগরিকত্ব চান এমন ব্যক্তিত্বদের আবেদনের আগে অন্তত ১২ মাস টানা এই দেশে বসবাস করতে হবে। আবেদনকারীরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য হবেন যদি তারা এই ১২ মাসের ঠিক আগের আট বছরে অন্তত ছয় বছর দেশে কাটিয়ে থাকেন।
আবেদনকারীদের আরও একটি ঘোষণা জমা দিতে হবে যে, তারা তাদের বিদ্যমান নাগরিকত্ব ‘অপরিবর্তনীয়ভাবে ত্যাগ’ করছে এবং ভারতকে তাদের ‘স্থায়ী বাসস্থান’ করতে চায়। এছাড়াও আরও বেশকিছু খুঁটিনাটি শর্ত রয়েছে যা ওয়েবসাইট থেকে দেখে নিতে পারবেন।