বাংলা হান্ট ডেস্ক : উত্তম কুমার পরবর্তী যুগে বাংলা সিনেমার (Bengali Cinema) অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন সুখেন দাস (Sukhen Das)। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এই জনপ্রিয় অভিনেতা-পরিচালকের অবদান ছিল অসামান্য। বাংলা সিনেমার এই ট্রাজিক হিরোর বাস্তব জীবনও ছিল ট্র্যাজেডিতে ভরা। তাই জন্মসূত্রে বনেদী বাড়ির ছেলে হয়েও একসময় তাঁর ঠাঁই হয়েছিল অনাথ আশ্রমে।
ট্র্যাজেডিতে ভরা সুখেন দাসের (Sukhen Das) জীবন
তাই খুব ছোটবেলাতেই এমনও বহু দিন গিয়েছে যখন তিনি কাটিয়েছেন অনাহারে। ১৯৩৮ সালের ২৮ জুলাই কলকাতার বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। বউবাজারের শ্রীনাথ লেনের নাম তো শুনেছেন অনেকেই। অনেকেই হয়তো জানেন না, এই শ্রীনাথ ছিলেন সুখেন দাসের (Sukhen Das) ঠাকুরদা। আর তাঁর বাবা ছিলেন অভিনেতা ফণীন্দ্রনাথ দাস।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই ফনীন্দ্রনাথ দাস যুক্ত ছিলেন নাট্য পরিচালনার কাজে। কিন্তু নাটকের প্রতি তাঁর ভালোবাসাই একদিন তাকে দেউলিয়া করে ছেড়েছিল। বনেদি বাড়ি থেকে সোজা ঠাঁই হয়েছিল ফুটপাতে।শোনা যায় ফনীন্দ্রনাথ প্রযোজনার কাজে যুক্ত হওয়ার পরেই দেনার দায়ে ডুবে গিয়েছিলেন। এমনকি কলকাতায় তাঁর ভাগে থাকার নয়টি বাড়িও বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন একইদিনে।
আর শেষ জীবনে এই আর্থিক বিপর্যয় সহ্য করতে পারেননি তিনি। সুখেন দাস (Sukhen Das) তখন খুবই ছোট। তখনই আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ফনীন্দ্রনাথ দাস। স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পরেই মৃত্যু হয় ফনীন্দ্রনাথের স্ত্রীর। তখন অভিভাবকহীন সুখেন দাস এবং তার ভাই বোনেদের মাথায় ছাদ না থাকায় ঠাঁই হয় অনাথ আশ্রমে।
যদিও তারপর একদিন তিনি নিজেই পালিয়ে যান অনাথ আশ্রম থেকে। তারপর শুরু হয় তাঁর আরো কষ্টের জীবন। ফুটপাতে কখনও অনাহারে কিংবা কখনও আধপেটা খেয়েই দিন চলতো অভিনেতার। এরপর ভাগ্যচক্রে একজন ডাক্তারের পরিচারকের কাজও করেছিলেন সুখেন দাস। এরপর ধীরে ধীরে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। তবে অভিন অভিনয় ছিল তাঁর রক্তে।
আরও পড়ুন : ইন্দ্রকুমার ফিনিশ! পর্ণাকে সাহায্য করতে দত্তবাড়িতে হাজির আরও এক নতুন সদস্য
তাই পড়াশোনার পাশাপাশি চলতে থাকে অভিনয়-ও। শোনা যায় কারও কাছ থেকে প্রশিক্ষণ না নিলেও দেখে দেখে অভিনয় শিখেছিলেন সুখেন দাস। কিন্তু সেই সময় স্টুডিওতে ঢোকা এত সহজ ছিল না। তাই স্টুডিওতে ঢোকার জন্য দারোয়ানের সাথে ঝামেলাও হয়েছিল তাঁর। কিন্তু এক ইরানি সাহেবের নজরে পড়তে তিনি স্টুডিওয় ঢোকার অনুমতি পান।
এরপর মাত্র ১১ বছর বয়সে ‘দাসী পুত্র’ সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ আসে। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক অভিনয় করেছেন, ‘সিংহ দুয়ার’, ‘দেনাপাওনা’, ‘শেষ বিচার’,’রাজা সাহেব’, ‘দাদামনি’,’প্রতিকার’,’হিরে চুনি’- সহ একাধিক জনপ্রিয় বাংলা সিনেমায়।