বাংলা হান্ট ডেস্ক: বেঙ্গালুরুর ব্যস্ত আইটি করিডর থেকে ফালুদার দোকানে—প্রদীপ কান্নানের সাফল্যের (Success Story) এই যাত্রাটি আজ দেশের অসংখ্য যুবকের কাছে অনুপ্রেরণা। তামিলনাড়ুর করুরের বাসিন্দা প্রদীপ ছয় বছর আগে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা তাঁর সহকর্মী থেকে আত্মীয়—অনেকের কাছেই ‘‘পাগলামি’’ বলে মনে হয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি সংস্থা ওরাকলের অপারেশনস প্রধানের উচ্চবেতনের চাকরি ছেড়ে তিনি ফিরে গিয়েছিলেন নিজের শহরে। উদ্দেশ্য—কর্পোরেট চাকরি নয়, নিজের আবেগকে অনুসরণ করা। আর সেই আবেগই জন্ম দিয়েছিল ‘দ্য ফালুদা শপ’-এর। ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে শুরু হওয়া সেই স্বপ্ন আজ ভারত এবং দুবাই জুড়ে ১৮টি আউটলেটের শক্তিশালী ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
প্রদীপ কান্নানের অসাধারণ সাফল্যের কাহিনি (Success Story):
২০১৯ সালে ওরাকলের মতো প্রতিষ্ঠানে প্রদীপের স্থায়ী ও নিরাপদ চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সবাইকে হতভম্ব করে দিয়েছিল। তাঁর সহকর্মীরা ভেবেছিলেন, প্রদীপ নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করছেন। কেউ কেউ সরাসরি তাঁকে পাগলও বলেছিলেন। কিন্তু প্রদীপ কান্নান নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। কর্পোরেট দুনিয়ার চাপে ক্লান্ত তিনি বুঝেছিলেন, প্রকৃত স্বপ্ন লুকিয়ে আছে অন্য কোথাও। তাই পুনরায় করুরে ফিরে এসে শুরু করলেন একটি ছোট ফালুদার দোকান। সামান্য পুঁজি, সীমিত সরঞ্জাম এবং অপরিসীম ইচ্ছে-শক্তি—এই তিনটি জিনিস দিয়েই শুরু হয় তাঁর সফল (Success Story) ব্যবসায়িক জীবনের।
আরও পড়ুন: বন্ধু পুতিনকে ৬ টি উপহার দিলেন মোদী! তালিকায় রয়েছে বঙ্গের এই সামগ্রীও
আজ ছয় বছর পর সেই ‘‘পাগল’’ সিদ্ধান্তই বদলে দিয়েছে তাঁর ভাগ্য। X-এ নিজের যাত্রা শেয়ার করে প্রদীপ লিখেছেন, ‘‘সবাই ভেবেছিল আমি ভুল করছি। কিন্তু আজ এটাই আমার শুরু।’’ তাঁর ‘‘দ্য ফালুদা শপ’’ এখন আর শুধু একটি দোকান নয়, বরং দুই দেশের বিস্তৃত নেটওয়ার্কসহ এক সফল (Success Story) ব্র্যান্ড। এই সাফল্য প্রমাণ করেছে, বাজারের চাহিদা, পণ্যের মান এবং উদ্যোক্তার সাহস—এ তিনের মিলেই তৈরি হয় নতুন গল্প। দুবাইয়ের বাজারেও ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করা তাঁর ব্যবসা বোঝা ও পরিকল্পনার সুদক্ষতারই সাক্ষ্য।
উদ্যোক্তা হওয়ার আগে প্রদীপের পেশাদার জীবনে ছিল দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। চেন্নাইয়ের সেলিব্রিটি ফ্যাশনস লিমিটেডে সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে শুরু। পরে দুবাইয়ের আল সিরে সাপ্লাই চেইন বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। দেশে ফিরে জেনপ্যাক্টে ব্যবসায়িক বিশ্লেষক এবং পরে ওরাকলে ছয় বছরের অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও দক্ষ করে তোলে। পাশাপাশি, NIFT থেকে ফ্যাশন টেকনোলজিতে স্নাতক এবং মুম্বাই বিজনেস স্কুল থেকে ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি তাঁর পেশাদার ভিত্তিকে করেছে শক্তিশালী। এই অভিজ্ঞতাই তাঁকে সাহস জুগিয়েছিল স্বপ্নকে বাস্তব করতে (Success Story)।

আরও পড়ুন: রবিবার থেকে সাতদিন খেলা দেখাবে শীত! দক্ষিণবঙ্গ নিয়ে ‘ভালো খবর’ দিল আবহাওয়া দপ্তর, আগাম আপডেট
প্রদীপ কান্নানের গল্প শুধুই একটি ব্যবসার সাফল্যের গল্প (Success Story) নয়; এটি আবেগ, আত্মবিশ্বাস এবং সাহসের এক বাস্তব উদাহরণ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন ছেড়ে ব্যস্ত রান্নাঘরে দাঁড়ানো তাঁর পছন্দই তাঁকে এক নতুন পরিচয় এনে দিয়েছে। এখন তাঁর লক্ষ্য—ভারত ও দুবাইয়ের সীমানা ছাড়িয়ে ফালুদা শপকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বানানো। তাঁর কাহিনি প্রমাণ করে, সাফল্য কখনও বেতন বা পদে নয়, বরং নিজের স্বপ্নকে পূরণ করার সাহসে লুকিয়ে থাকে।












