বিরল খনিজ নিয়ে চিন-আমেরিকা সংঘাত তুঙ্গে, পাশে ভারতকে চাইছে ওয়াশিংটন

Published on:

Published on:

America-China conflict over rare minerals.

বাংলাহান্ট ডেস্ক: বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও চিনের (America-China) মধ্যে সংঘাত ক্রমেই তীব্র আকার নিচ্ছে। চিনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নীতির জেরে এখন বিশ্ব অর্থনীতি কার্যত নতুন এক অস্থিরতার মুখে। এ পরিস্থিতিতে চিনের মোকাবিলায় এবার ভারতকে পাশে চাইছে আমেরিকা। মার্কিন অর্থসচিব স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, “চিনের বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ সংকেত। এই লড়াই আসলে চিন বনাম গোটা বিশ্ব। চিন যেন এই খনিজ সম্পদকে রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত করতে না পারে, তার জন্য আমেরিকা সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে।”

নতুন সংঘাতে আমেরিকা-চিন (America-China)

সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট স্পষ্ট জানান, আমেরিকা (America-China) এই মুহূর্তে ভারত, ইউরোপ এবং এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে একযোগে চিনের আধিপত্য ঠেকাতে আলোচনা শুরু করেছে। তাঁর কথায়, “চিন বিশ্বের সমস্ত সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর বন্দুক টেনে ধরেছে। এই সংকট কাটাতে আমেরিকা একা নয়, আমরা চাই ভারত ও ইউরোপও পাশে দাঁড়াক।”

আরও পড়ুন: জলমগ্ন কলকাতায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃতদের পরিবারকে চাকরি দেবে রাজ্য সরকার, বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

উল্লেখ্য, ৯ অক্টোবর চিনের (America-China) বাণিজ্য মন্ত্রক নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, ০.১ শতাংশের বেশি বিরল খনিজ পদার্থ রয়েছে এমন কোনও পণ্য রপ্তানি করতে হলে সরকারের বিশেষ অনুমতি লাগবে। এমনকি বিদেশী সামরিক ব্যবহারের জন্যও এই খনিজ রপ্তানি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এই নীতির ফলে বিশ্বব্যাপী শিল্পক্ষেত্রে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, কারণ ইলেকট্রনিক্স, নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা—প্রতিটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করছে এই বিরল খনিজের উপর।

বর্তমানে বিশ্বের বিরল খনিজ সরবরাহের প্রায় ৭০ শতাংশই চিনের হাতে এবং ৯০ শতাংশের বেশি প্রক্রিয়াকরণও ওখানেই হয়। ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান বলছে, চিনের কাছে রয়েছে প্রায় ৪৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন বিরল খনিজ, যেখানে ব্রাজিলের মজুত ২১ মিলিয়ন মেট্রিক টন এবং ভারতের কাছে রয়েছে ৬.৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এই একচ্ছত্র প্রভাবই এখন চিনকে (America-China) আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে।

America-China conflict over rare minerals.

আরও পড়ুন:১০০০ থেকে বেড়ে ১৫০০! রাজ্যে বার্ধক্য ভাতা বাড়ানোর কথা বলছে কেন্দ্র সরকার

এই প্রেক্ষাপটে আমেরিকার (America-China) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শুক্রবার ঘোষণা করেছেন, ১ নভেম্বর থেকে চিনা পণ্যের উপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, ফলে মোট শুল্ক দাঁড়াবে প্রায় ১৩০ শতাংশে। ট্রাম্পের বক্তব্য, “চিনের মনোভাব ক্রমেই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। আমেরিকার শিল্পকে রক্ষা করতে আমাদের কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে।” যদিও কয়েক ঘণ্টা পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি খানিকটা নরম সুরে লেখেন, “আমরা চিনকে আঘাত করতে চাই না, বরং সাহায্য করতে চাই।”

এদিকে, স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, “বেজিংয়ের এই সিদ্ধান্ত কোনও শক্তির প্রদর্শন নয়, বরং দুর্বলতার প্রকাশ। সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিশীল রাখতে এবং উত্তেজনা কমাতে আমেরিকা (America-China) যা যা দরকার তাই করবে।” তবে তাঁর বক্তব্যে একথা স্পষ্ট—চিনের এই নীতির বিরুদ্ধে আমেরিকা একা লড়তে চাইছে না। বরং ভারতের মতো কৌশলগত অংশীদারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংঘাতের মোকাবিলা করতে চাইছে ওয়াশিংটন। সব মিলিয়ে বিরল খনিজকে ঘিরে এই ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন এখন শুধু অর্থনীতির বিষয় নয়, বরং বিশ্বশক্তির ভারসাম্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।