বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে একদিকে যখন ভারতের (India) ওপর বিশাল শুল্কের বোঝা চাপিয়েছেন ট্রাম্প সেই আবহেই আমেরিকার বৃহত্তম ব্যাঙ্ক জেপি মরগ্যান চেজ অ্যান্ড কোং ভারতের জন্য তাদের ভল্ট খুলে দিয়েছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ভারতের অর্থনীতিকে “মৃত” বলে বিবেচিত করলেও জেপি মরগান ভারতের অর্থনীতি এবং এর ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপের ওপর আস্থা রেখেছে।
ভারতের (India) ওপর রয়েছে ভরসা:
উল্লেখ্য যে, এর আগে, আমেরিকান বিনিয়োগ সংস্থা মরগ্যান স্ট্যানলিও ভারতের (India) অর্থনীতির ওপর আস্থা দেখিয়েছিল। আমেরিকান ব্যাঙ্ক, ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম এবং রেটিং সংস্থাগুলি যেভাবে ভারতের অর্থনীতির ওপর ভরসা রাখছে তাতে স্পষ্ট যে তারা ট্রাম্পের নীতি এবং সিদ্ধান্তগুলিকে পরোয়া করে না। মুম্বাইয়ে এক সাক্ষাৎকারে আমেরিকার বৃহত্তম ব্যাঙ্কের উচ্চ আধিকারিক এই বিষয়ে নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
জানিয়ে রাখি যে, জেপি মরগ্যান চেজ অ্যান্ড কোং ভারতে (India) তাদের কর্পোরেট ব্যাঙ্কিং উপস্থিতি শক্তিশালী করছে। শুধু তাই নয়, তারা ইভি থেকে শুরু করে ডেটা সেন্টার এবং সৌরশক্তির মতো সেক্টরগুলিতে মনোনিবেশ করছে। এর একটি কারণও আছে। এই শিল্পগুলির সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলি দেশের অর্থনীতিতে তাদের ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে। এমতাবস্থায়, মার্কিন ব্যাঙ্কিং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে গ্লোবাল কর্পোরেট ব্যাঙ্কিংয়ের সহ-প্রধান অলিভার ব্রিঙ্কম্যান মুম্বাইয়ে এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, চাহিদার নিশ্চয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্টও শুরু হবে।
আরও পড়ুন: স্টাইলিশ লুক, হাইটেক ফিচার্স! Maruti Suzuki লঞ্চ করল নতুন SUV “Victoris”, অবাক করবে দাম
গ্রোথে কোনও মন্দা থাকবে না: জেপি মরগ্যান কর্পোরেট ব্যাঙ্কিং থেকে প্রাপ্ত রেভিনিউর দিক থেকে ভারত (India) এবং জাপানকে তার ২ টি দ্রুত বর্ধনশীল এশিয়ান বাজার হিসেবে গণ্য করে। এদিকে, বর্তমানে ওয়াশিংটন একাধিক ভারতীয় আমদানির ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত করলেও বৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকবে বলে আশা করছে সংস্থাটি। এদিকে, গত ত্রৈমাসিকে ভারতের বৃদ্ধির হার ৫ ত্রৈমাসিকের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। অপরদিকে, অর্থনীতিবিদরা উদ্বিগ্ন যে অত্যধিক শুল্ক শ্রম-নিবিড় শিল্পগুলিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং বৃদ্ধির হারকে ধীর করে দিতে পারে।
ভারতে ব্যবসা ক্রমবর্ধমান হচ্ছে: সিঙ্গাপুর বেসড ব্রিঙ্কম্যানের মতে, শুল্কের ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ বেশ জটিল। তবে জেপি মরগ্যানের ভারতে (India) ব্যবসা সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ব্রিঙ্কম্যান বলেন, ব্যাঙ্কের স্থানীয় কর্পোরেট ব্যাঙ্কিং গত ২-৩ বছর ধরে বার্ষিক ৩০ শতাংশ হারে রেভিনিউ বৃদ্ধি করছে এবং তিনি আগামী কয়েক বছরেও একই রকম গ্রোথের আশা করেন। এদিকে, গত জুন মাসে এসএন্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ভারতীয় কোম্পানিগুলি আগামী ৫ বছরে তাদের ক্যাপেক্স দ্বিগুণ করে ৮০০ বিলিয়ন থেকে ৮৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কারণ তারা গ্রোথের সুযোগ খুঁজছে। ব্রিঙ্কম্যান বলেন যে, “আমরা সাস্টেইনেবল এনার্জি, ডেক, শিল্প এবং পরিকাঠামোতে আমাদের কর্পোরেট ব্যাঙ্কিং উপস্থিতি প্রসারিত করতে চাই।” তিনি আরও বলেন যে, “জেপি মরগ্যান এই সেক্টরগুলিতে মনোনিবেশ করার জন্য তার দেশীয় কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে।”
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের সমগ্র পরিকল্পনায় জল ঢাললেন পুতিন! আরও সস্তায় রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে ভারত
ভারতে জেপির ১,৯০০ ক্লায়েন্ট রয়েছে: ভারতে (India) ওই ব্যাঙ্কের ক্লায়েন্ট সেগমেন্টে মিড-ক্যাপ কোম্পানি এবং লার্জ-ক্যাপ কোম্পানি রয়েছে। যাদের রেভিনিউ ৩০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে। এই মার্কিন কোম্পানিটি ভারতে প্রায় ১,৯০০ ক্লায়েন্টকে পরিষেবা প্রদান করে। তাদের একটি দলও রয়েছে। যারা স্টার্টআপ এবং ইউনিকর্নের ওপর দৃষ্টিনিক্ষেপ করে। ভারতে জেপি মরগ্যানের ব্যবসা কমার্শিয়াল এবং ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং, পেমেন্ট এবং সিকিউরিটিজ পরিষেবার মধ্যে বিস্তৃত। এছাড়াও, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু এবং হায়দ্রাবাদে কোম্পানির কর্পোরেট সেক্টরে ৫৫,০০০-এরও বেশি কর্মী কাজ করেন। যদিও ভারতে কর্পোরেট ব্যাঙ্কিংয়ের সুযোগ ভালো। তবে, প্রতিযোগিতা তীব্রতর হচ্ছে এবং কিছু বিশেষজ্ঞ ভবিষ্যতের বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন।
ভারতে জাপানি ব্যাঙ্কগুলির বিস্তৃতি: জানিয়ে রাখি যে, গত মাসে, ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা কর্পোরেশনের একজন উচ্চ ভারতীয় আধিকারিক জানিয়েছিলেন যে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং গ্লোবাল ট্রেড সিনারিও সম্পর্কে স্পষ্টতা না আসা পর্যন্ত কোম্পানিগুলি বড় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া এড়িয়ে চলেছে। এদিকে, ব্লুমবার্গের সংকলিত তথ্য অনুসারে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতীয় (India) ঋণগ্রহীতাদের জন্য ও ফরেন কারেন্সি লোনের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে মিতসুবিশি ইউএফজে ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ ইনকর্পোরেটেড এবং সুমিতোমো মিতসুই ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ মার্কিন ঋণদাতাদের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত, এই তালিকায় জেপি মরগ্যান ১৮ তম স্থানে রয়েছে।