বাংলাহান্ট ডেস্ক: করোনা অতিমারির অনিশ্চয়তার মধ্যেই জীবনের বদলে সাফল্যের (Success Story) শিখরে পৌঁছানোর দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নেন বেঙ্গালুরুর দুই প্রকৌশলী রাশ্মি ও অঙ্কুর সচান। ২০২১ সালে শহুরে চাকরি ও ব্যস্ত জীবন ছেড়ে তাঁরা ফিরে আসেন উত্তরপ্রদেশের কানপুর জেলার নিজস্ব গ্রাম চর্তুরি পুরবায়। নিজেদের ১৫ একর পৈতৃক জমিতে একেবারে শূন্য থেকে জৈব ও প্রাকৃতিক চাষ শুরু করার এই যাত্রা আজ একটি অনুপ্রেরণাদায়ী কৃষি মডেলে পরিণত হয়েছে।
রশ্মি ও অঙ্কুরের অনন্য সাফল্যের কাহিনি (Success Story)
চাষাবাদের আগে কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও তাঁরা স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন সম্পূর্ণ ‘জিরো কেমিক্যাল’ বা রাসায়নিকমুক্ত কৃষির। মাটির গুণমান উন্নয়নের জন্য তাঁরা রাজস্থান থেকে লাল মাটি এনেছিলেন, যা আয়রন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজে সমৃদ্ধ। এর পাশাপাশি জীবামৃত, ভার্মি কম্পোস্ট, নিম ও সর্ষের খোলের মতো প্রাকৃতিক সারের ব্যবহার এবং একাধিক কর্মশালায় অংশ নিয়ে রশ্মি জৈব চাষের আধুনিক পদ্ধতিগুলো রপ্ত করেন।
আরও পড়ুন: রেকর্ড বাড়ল সোনার দাম! শীঘ্রই ২ লক্ষে পৌঁছে যাবে হলুদ ধাতু? আজকের রেট
জমিতে জৈব বৈচিত্র্য বাড়াতে তাঁরা ৩৫টিরও বেশি প্রজাতির গাছ রোপণ করেছেন। পরিবেশ রক্ষাকারী তেঁতুল, বট, অশ্বত্থের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন পেঁপে, কলা, আম ও চিকু। ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার কথা ভেবে জমির সীমানায় প্রায় ২৫০টি সেগুন, মহগনি ও কদম গাছ লাগানো হয়েছে, যা পরিণত বয়সে মূল্যবান কাঠ হিসেবে বিক্রি করা যাবে। বর্তমানে ৫.৫ একর জমিতে সক্রিয়ভাবে বহুস্তরী ও অন্তঃফসল চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
খামারেই তৈরি করা হয় সমস্ত জৈব সারের ও কীটনাশক, যেমন জীবামৃত ও দশপর্ণী অর্ক। ২১ দিন ধরে তামার পাত্রে সংরক্ষিত টক ছাঁচ ব্যবহার করে অত্যন্ত কম খরচে মাটির উর্বরতা ধরে রাখার এক কার্যকর পদ্ধতি তাঁরা আবিষ্কার করেছেন। সেচের জন্য জমির ধরন অনুযায়ী ড্রিপ ও স্প্রিঙ্কলার পদ্ধতি এবং ফসল কাটার পরে মুগ ও উড়দ ডাল চাষ করে মাটিতে প্রাকৃতিক নাইট্রোজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।

আরও পড়ুন: ফর্ম অসম্পূর্ণ বা নথি না থাকলেই তলব! SIR এর প্রথম দফার শুনানিতে কারা ডাক পাবেন? জানুন
তাঁদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো ‘ফার্ম-টু-ফর্ক’ বা খামার থেকে থালা পর্যন্ত সরাসরি বিপণনের মডেল। ‘তুহি ফার্মস’ ব্র্যান্ডের অধীনে তাঁদের তৈরি হলুদ গুঁড়ো, সর্ষের তেল, ডালিয়া ও বেসনের মতো জৈব পণ্য আজ আইআইটি কানপুর, দিল্লি ও বেঙ্গালুরুর সচেতন গ্রাহকদের কাছে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্যসম্মত ও রাসায়নিকমুক্ত পণ্যের জন্য গ্রাহকরা প্রিমিয়াম দাম দিতে রাজি, যার ফলে এই উদ্যোগটি শুধু টেকসইই নয়, লাভজনকও হয়ে উঠেছে। শহুরে জীবন ত্যাগ করে গ্রামে ফিরে আসা এই দম্পতির গল্প আজ নতুন প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।












