হিজাব বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইরান, মহিলারা বেনকাব হয়ে পোড়াচ্ছেন পর্দা! ভাইরাল ভিডিও

বাংলা হান্ট ডেস্ক: হিজাব আইন (Hijab Laws) লঙ্ঘনের জন্য আটক হওয়ার পর ২২ বছরের যুবতী মেহসা আমিনির (Mahsa Amini) মৃত্যুতে রীতিমতো গর্জে উঠেছে ইরান (Iran)। পাশাপাশি, ওই ঘটনার প্রতিবাদে সেখানকার মহিলারা হিজাব ফেলে দিয়ে সরকার বিরোধী স্লোগানও দিতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও ভাইরাল হতে শুরু করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media)।

এদিকে, এই বিক্ষোভকে হঠাতে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে উরমিয়া, পিরানশাহর এবং কেরমানশাহতের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তিন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন মহিলাও রয়েছেন। শুধু তাই নয়, মেহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় হিজাব আইন ও পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

ইরানের হিজাব আইনে কি বলা আছে: ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর, ইরানের কর্তৃপক্ষ একটি বাধ্যতামূলক পোষাক কোড জারি করে। যেখানে সমস্ত মহিলাদের একটি হেড স্কার্ফ এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরতে বলা হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল জনসমক্ষে মহিলাদের শরীর সম্পূর্ণভাবে ঢেকে রাখা। এমতাবস্থায়, সেখানকার Morality Police এই হিজাবের বিষয়টিতে লক্ষ্য রাখে। পাশাপাশি, এই পুলিশ অফিসারদের মহিলাদের থামিয়ে তাঁরা চুল বেশি রেখেছেন কি না কিংবা মেক আপ রয়েছে কি না সেইসব পরীক্ষা করারও অধিকার রয়েছে। এমতাবস্থায়, নিয়ম লঙ্ঘিত হল শাস্তির মধ্যে রয়েছে জরিমানা, জেল বা বেত্রাঘাত।

ঠিক কি ঘটেছে: জানা গিয়েছে, ২২ বছর বয়সী মেহসা আমিনি পশ্চিম ইরানের সাকেজের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তেহরানে এসেছিলেন। এদিকে, তিনি হিজাব পরার বিরুদ্ধে ছিলেন বলে তিনি সেটি পরিধান করেননি। এমতাবস্থায়, মেহসাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে, গ্রেপ্তারের ঠিক ৩ দিন পর অর্থাৎ, ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান বলে জানা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গ্রেফতারের সময় মেহসা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। পুলিশের গাড়িতে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। কয়েক ঘন্টা পরে, তাঁর পরিবারকে জানানো হয় যে, মেহসা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। যদিও, ইরানের পুলিশ মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এমতাবস্থায়, তারপর থেকেই প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায় ইরানজুড়ে। এছাড়াও, পশ্চিম কুর্দিস্তানের সাকেজে মেহসা আমিনির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়ে ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী যাতে গোপনে তাঁর দেহ কবরে না দিতে পারেন সেজন্য হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতে থাকেন। সাকেজের কবরস্থান থেকে যে ভিডিওগুলি প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা গেছে প্রতিবাদের সময় মহিলারা তাঁদের হিজাব ছুঁড়ে ফেলছেন। পাশাপাশি, কুর্দিস্তানের রাজধানী সানন্দাজেও বিক্ষোভের রেশ পৌঁছেছে।

এদিকে, ইরানি মিডিয়া দাবি করেছে যে, পুলিশ সাকেজের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে এবং গুলিও চালিয়েছে। এতে আহত হয়েছেন বহু মানুষ। এই প্রসঙ্গে একজন ইরানি সাংবাদিক মাসিহ আলিনেজাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও শেয়ার করে এই ঘটনার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন। তিনি লিখেছেন, “ইরানি নারী! আপনার জোরপূর্বক চাপানো হিজাব খুলে ফেলুন, নিপীড়নের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রতীকটি পুড়িয়ে ফেলুন। ভুলে যাবেন না, মেহসা আমিনি হিজাব না পরার জন্য মোরাল কর্তৃক নিহত হয়েছিলেন এবং এখন আমরা সবাই মেহসা। আমরা সবাই বাধ্যতামূলক হিজাব এবং ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিবাদ করি। আমরা স্বাধীনতা চাই।”

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর