তৈরি হবে নয়া সঙ্কট? ১০ বছরে ৩০ লক্ষ চাকরি ‘খেতে পারে’ AI, রিপোর্টে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

Published on:

Published on:

Articial Intelligence can 'take away' 3 million jobs in 10 years.
Follow

বাংলাহান্ট ডেস্ক: UK-র শ্রমবাজারে আগামী দশকে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর এডুকেশনাল রিসার্চের এক সাম্প্রতিক রিপোর্ট। ওই গবেষণা বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) এবং অটোমেশনের দ্রুত প্রসারের ফলে দেশটিতে প্রায় ৩০ লাখ লো-স্কিল চাকরি ২০৩৫ সালের মধ্যেই পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে। বিশেষত ট্রেড, মেশিন অপারেশন এবং অ্যাডমিন সংক্রান্ত কাজগুলো দ্রুত মেশিন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। এই চাকরিগুলোর অধিকাংশই পুনরাবৃত্তিমূলক এবং পূর্বনির্ধারিত হওয়ায় সেগুলো AI ও রোবোটিক সিস্টেম সহজেই সম্পন্ন করতে পারছে। ফলে কম দক্ষ কর্মীদের জন্য চাকরি হারানোর ঝুঁকি আগামী দিনে আরও তীব্র হতে চলেছে বলে রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে।

সঙ্কটে ভবিষ্যৎ? ১০ বছরে ৩০ লক্ষ চাকরি ‘খেতে পারে’ AI (Artificial Intelligence):

NFER-এর বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, প্রশাসনিক সহকারী, মেশিন অপারেটর, গুদামের কর্মী, ক্যাশিয়ার, এবং প্লাম্বিং, ইলেকট্রিক্যাল বা রুফিংয়ের মতো বিভিন্ন ট্রেড পেশাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। রিপোর্ট বলছে, এই কাজগুলিতে অত্যধিক ম্যানুয়াল ও রুটিন টাস্ক জড়িত, ফলে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্রুত এগুলোকে দখল করছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এই পেশাগুলোর সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের বেশিরভাগেরই নতুন দক্ষতা শেখার সুযোগ বা সক্ষমতা সীমিত। তাই একবার কাজ হারালে তাদের জন্য পুনরায় কর্মসংস্থান তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আরও পড়ুন: AI এখন নির্বাচন ব্যবস্থার ‘ডিজিটাল অভিভাবক’! চিহ্নিত করবে ভুয়ো নাম, নথি থেকে অনুপ্রবেশকারী

তবে রিপোর্টে কিছু ইতিবাচক দিকও তুলে ধরা হয়েছে। NFER-এর মতে, আগামী দশ বছরে UK-তে প্রায় ২৩ লাখ নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হতে পারে, তবে সেগুলোর বেশিরভাগই উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন সেক্টরে হবে। বিশেষত ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও গবেষণা খাতে নতুন নিয়োগের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। কারণ প্রযুক্তির অগ্রগতি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি এসব সেক্টরে দক্ষ বিশেষজ্ঞদের চাহিদাও বাড়ায়। যদিও এখানে একটি জটিলতা রয়েছে—AI চালিত টুল অনেক ক্ষেত্রে জুনিয়র স্তরের কাজ যেমন গবেষণা সহযোগিতা, তথ্য বা ডকুমেন্ট প্রস্তুতির দায়িত্ব নিয়ে নেবে, ফলে নতুনদের জন্য প্রবেশের সুযোগ কমে যেতে পারে।

রিপোর্টটি সতর্ক করে বলেছে, AI নিয়ে আতঙ্ক অনেক ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত হলেও লো-স্কিল কর্মীদের সামনে যেটি প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াচ্ছে তা হলো রিস্কিলিং বা পুনঃদক্ষতা অর্জন। যেসব নতুন চাকরি তৈরি হবে, সেগুলি মূলত পেশাগত বা অ্যাসোসিয়েট পেশাগত পর্যায়ের, যেখানে কম দক্ষ কর্মীরা সহজে পৌঁছতে পারেন না। এর ফলে ১০ থেকে ৩০ লাখ মানুষের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা থাকলেও তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই নতুন সুযোগে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবেন। গবেষকরা মনে করছেন, এই ফারাক UK-র শ্রমবাজারে ভবিষ্যতে বড় চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং সামাজিক বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

Articial Intelligence can 'take away' 3 million jobs in 10 years,

আরও পড়ুন:এবার ঘরে বসেই তৈরি করে নিতে পারবেন ডিজিটাল ইনকাম ও রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট, দেখুন পদ্ধতি

বিশ্বজুড়ে AI চালিত পরিবর্তনের প্রভাবও রিপোর্টে উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে লন্ডনে ক্লিফোর্ড চান্স তাদের বিজনেস সার্ভিস টিমের ১০% কর্মী কমিয়েছে। PwC ২০২১ থেকে ২০২৬-এর মধ্যে ১ লক্ষ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা বাতিল করেছে, কারণ AI তাদের মানবসম্পদ প্রয়োজন কমিয়ে দিয়েছে। অ্যাপল তাদের সেলস টিমের কিছু ভূমিকা কমিয়েছে এবং গুগল ডিজাইন ও ক্লাউড রিসার্চ ইউনিট থেকে ১০০-র বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে। যদিও NFER গবেষকরা মনে করেন, এই ছাঁটাইয়ের পেছনে AI-র পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও বড় ভূমিকা পালন করছে। সব মিলিয়ে রিপোর্টটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আগামী দশক যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে AI-নির্ভর অটোমেশনের কারণে একদিকে যেখানে দক্ষ কর্মীদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে, অন্যদিকে কম দক্ষ কর্মীদের জন্য পরিস্থিতি হয়ে উঠতে পারে আরও সংকটময়।