বাংলাহান্ট ডেস্ক: সব কিছু হারিয়েও কিভাবে সফলতা অর্জন করে সাফল্যের (Success Story) চূড়ায় পৌঁছতে হয় তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ কাশ্মীরের আসিয়া বেগম। আসিয়া বেগম জীবন একের পর এক বিপর্যয়ে ভেঙে পড়েছিল। স্বামীকে হারানো, চোখের সামনে নিজের বাড়ি পুড়ে যেতে দেখা—সবকিছুই যেন তাঁর স্বপ্ন আর ভবিষ্যৎকে গ্রাস করেছিল। তবু আগুনে পুড়েও নষ্ট হয়নি তাঁর সাহস। বাবার বাড়িতে ফিরে এসে নতুন করে জীবন শুরু করেন আসিয়া। ছোট্ট একটি ছাদের ওপর মাশরুম ও সবজি চাষ শুরু করে আজ তিনি স্বাবলম্বী, আর এই কাজ থেকেই বছরে লক্ষাধিক টাকা রোজগার করছেন।
আসিয়া বেগমের অসাধারণ সাফল্যের গল্প (Success Story)
২০১৫ সাল ছিল আসিয়ার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। মাত্র ৩২ বছর বয়সে তাঁর স্বামী, যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, উত্তর কাশ্মীরে এক সংঘর্ষে শহিদ হন। এই শোক তাঁকে ভেতর থেকে ভেঙে দেয়। সমাজের নানা কটূক্তি আর ‘অল্পবয়সি বিধবা’ তকমার চাপে পড়ে ২০১৭ সালে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। কিন্তু সুখ ফেরার আগেই আরেক বিপর্যয়—এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তাঁদের পুরো বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আসিয়া স্বামীর সঙ্গে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকেই নতুন পথচলা শুরু হয় (Success Story)।
আরও পড়ুন:ভোটের আগে শেষ বাজেট! নবান্নের কড়া নির্দেশ, সব দপ্তরকে ২৪ ডিসেম্বরের ডেডলাইন
আসিয়া জানান, অনেকে বলেছিল তাঁর জীবন শেষ। কিন্তু বাবাই একমাত্র মানুষ যিনি তাঁর উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। সেই ভরসাতেই তিনি কাজ শুরু করেন। আজ তিনি ছাদে সারা বছর নানা সবজি চাষ করেন—পালং, টমাটো, লঙ্কা, বেগুন, পেঁয়াজ, আলু, বিনস, গাজর, নানা পাতা জাতীয় সবজি ও চারা। পাশাপাশি মাশরুম চাষও চলছে নিয়মিত, যা তাঁর আয়ের বড় উৎস (Success Story)।
এই উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল আরও আগে। প্রথম স্বামীর ব্যাটালিয়নে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কমান্ড্যান্ট তাঁকে মানসিক চাপ সামলাতে মাশরুম চাষের পরামর্শ দেন। তখনই নিজের ১০x১০ ফুটের একটি ঘরে ছোট পরিসরে মাশরুম চাষ শুরু করেন আসিয়া। পরে মাশরুমের অবশিষ্ট কম্পোস্ট দিয়ে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করে সবজি চাষের ভাবনা আসে। জমি না থাকায় তিনি বাড়ির ছাদকেই বেছে নেন, প্লাস্টিকের ঝুড়িতে কম্পোস্ট ভরে শুরু হয় ছাদ-বাগান (Success Story)।

আরও পড়ুন;:মেসির জন্য হানিমুন বাতিল, প্ল্যাকার্ড হাতে রাতভর অপেক্ষা নবদম্পতির, শেষে…
আজ আসিয়া প্রতি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কেজি মাশরুম উৎপাদন করেন। শুধু নিজের উৎপাদনই নয়, জেলার অন্যান্য মহিলা ও ছোট কৃষকদের উৎপাদিত মাশরুমও তিনি বাজারজাত করেন। মাশরুম থেকে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা, সবজি থেকে ১০ হাজার, চারা বিক্রি থেকে ৭ থেকে ১০ হাজার এবং ঘরে তৈরি মশলা থেকে অতিরিক্ত আয়—সব মিলিয়ে তাঁর মাসিক রোজগার ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। ছাদের ছোট্ট উদ্যোগ আজ কাশ্মীরের এক নারীর বড় সাফল্যের গল্প (Success Story)।












