বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে যে সময়ের সাথে সাথে সমগ্ৰ বিশ্বজুড়ে বড় বড় শাসক এবং তাঁদের সাম্রাজ্যের পতন ঠিক কেমনভাবে ঘটেছে! বর্তমান প্ৰতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন একজন সুলতানের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যাঁর কাছে একসময়ে পৃথিবীর অর্ধেক সোনা ছিল। কিন্তু, এখন তাঁর দেশ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মূলত, আমরা মালি সাম্রাজ্যের সুলতান মানসা মুসার (Mansa Musa)-র বিষয়ে জানাচ্ছি। পশ্চিম আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের একসময়ের শাসক মানসা মুসার প্রচুর সম্পদ ছিল। কিন্তু, তাঁর দেশ বর্তমানে চরম দারিদ্রের সম্মুখীন হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে আমেরিকান ওয়েবসাইট USAID অনুসারে জানা গিয়েছে, আফ্রিকান দেশ মালির প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা চরম দারিদ্রতার মধ্যে বসবাস করেন এবং সেখানকার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ গ্রামীণ এলাকায় থাকেন। তাই মালিকে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের তালিকায় রাখা হয়েছে। ভাবুন তো, যে দেশের সুলতানের হাতে পৃথিবীর অর্ধেক সোনা ছিল আজ সেই দেশই দরিদ্র দেশের তালিকায় জায়গা পেয়েছে! যা সত্যিই অবাক করে দেবে প্রত্যেককে।
বিশ্বের বৃহত্তম গোল্ড প্রোডিউসার: প্রায় ৮০০ বছর আগে, মানসা মুসা ১৩১২ থেকে ১৩৩৭ সাল পর্যন্ত মালি সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন। সমগ্র বিশ্ব এই শাসককে গোল্ড প্রোডিউসার হিসেবে জানত। অনেক ঐতিহাসিক মানসা মুসাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কথিত আছে যে, মানসা মুসা যখন মালির শাসক ছিলেন, তখন সেখানে সোনার ভান্ডার ছিল। সেই সময়ে মালিতে প্রতি বছর ১,০০০ কেজি সোনা খনন করা হত। মানসা মুসা একজন বড় গোল্ড প্রোডিউসার ছিলেন। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছে সোনা কিনতে আসতেন। পাশাপাশি, বলা হয় যে মানসা মুসার কাছে এত সোনা ছিল যে তিনি তাঁর প্রাসাদেও প্রচুর পরিমাণে সোনা রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন: বারবার চক্কর কাটতে হবে না অফিসের! এবার এইভাবে ৭ দিনেই তৈরি হবে পাসপোর্ট, বড় পদক্ষেপ সরকারের
মালি সাম্রাজ্য কিভাবে ধ্বংস হয়ে যায়: মানসা মুসার মালি থেকে মক্কা পর্যন্ত ৬,৫০০ কিলোমিটার যাত্রা বহু আলোচিত ছিল। পাশাপাশি, তিনি তাঁর ওই সফরের সময়ে মিশরের মানুষের মধ্যে সোনা বিতরণ করেন। এই যাত্রা শেষ করার পর, মানসা মুসা ১৩৩৭ সালে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে মারা যান।
আরও পড়ুন: ৬০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ! দুঃসময়ে “পুরোনো বন্ধু”-কে পাশে পেলেন আদানি
এদিকে, মানসা মুসার মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেরা মালির ওপর তাঁদের শাসন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এর ফলে কয়েক হাজার মাইল জুড়ে বিস্তৃত মুসার সাম্রাজ্য বিভিন্ন টুকরোয় বিভক্ত হয়ে যায়। আজ মালির অবস্থা এমন হয়েছে যে এটি বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলির মধ্যে গণনা করা হয়। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, বহু বছর ধরে মালি একটি উপনিবেশ হিসেবে ফ্রান্স দ্বারা শাসিত ছিল। গত কয়েক বছর ধরে, এই দেশটি বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং হিংসাত্মক ঘটনার মতো গুরুতর সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে। এমনকি, বারবার সামরিক এবং প্রশাসনিক টানাপোড়েনে সৃষ্ট হিংসাত্মক পরিস্থিতির কারণে সেখানকার লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।