বাংলা হান্ট ডেস্ক: আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬-এ বাংলাদেশে (Bangladesh) নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ওই নির্বাচন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ ২০২৪ সালের ছাত্র বিক্ষোভ এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা থেকে বিদায়ের পর এটিই হবে ওই দেশের প্রথম নির্বাচন। কিন্তু ভোটের আগেও দেশে ধর্মীয় হিংসাত্মক ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। শুধু তাই নয়, যার সংখ্যালঘু হিন্দুরা বারংবার হিংসার শিকার হচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে একজন হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই আবহে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি মনে করছে যে, নির্বাচনের পরিবেশ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বাংলাদেশে (Bangladesh) আতঙ্কিত সংখ্যালঘুরা:
সবথেকে উদ্বেগের বিষয় হল, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের কাছে পুলিশ মোতায়েন ছাড়া আর কোনও সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নেই বলেই মনে হচ্ছে। ২০২৪ সালে, নোবেলজয়ী মোহাম্মদ ইউনূস সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে, তারপরে পরিস্থিতি আদৌ স্বাভাবিক হয়নি। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণ সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে। মন্দিরে হামলা থেকে শুরু করে সম্পত্তি এবং জীবনহানি আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে।

ভয়াবহ পরিসংখ্যান: ইতিমধ্যেই সংসদে ভারত সরকারের উপস্থাপিত পরিসংখ্যান এই পরিস্থিতির গুরুত্ব প্রকাশ করে। কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিংয়ের মতে, ২০২৪ সালের অগাস্ট থেকে ২৩ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের হিন্দু মন্দিরে ১৫২ টি হামলার খবর পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ৭৬ টি হামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এই হামলার মধ্যে রয়েছে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং মারাত্মক হিংস্রতা।
ঢাকা সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন: ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, বাংলাদেশ সরকার দাবি করে যে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত ৮৮ টি মামলায় ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে, পুলিশ তদন্তে মোট ১,২৫৪ টি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে, আসল বিষয় হল, হিন্দু সম্প্রদায় এখনও নিরাপত্তাহীন বোধ করছে। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ প্রকাশ্যে তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানাতে ভয় পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: হয়ে যান সতর্ক! ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সেরে রাখুন এই কাজগুলি, নাহলেই দিতে হবে জরিমানা
রাজনীতি ও ধর্মের প্রাচীন খেলা: জানিয়ে রাখি যে, কয়েক দশক ধরে, বাংলাদেশের রাজনীতি আওয়ামী লীগ এবং BNP-র মধ্যে দোদুল্যমান রয়েছে। উভয় দলের বিরুদ্ধেই নির্বাচনে ধর্মীয় উস্কানি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে তুলনামূলকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, তাঁর শাসনকালেও সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ২০২৫ সালের মে মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে। পাশাপাশি, আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেয়, যা রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
আরও পড়ুন: আদানি গ্রুপের মেগা প্ল্যান! এই সেক্টরে হবে ১ লক্ষ কোটির বিনিয়োগ, মিলল বড় আপডেট
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ এবং ভারতের ভূমিকা: ২০২৫ সালের মে মাসে United States Commission on International Religious Freedom তথা USCIRF-এর একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, সংখ্যালঘুরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীত। ভুল তথ্য এবং গুজব হিংসাকে আরও উস্কে দিচ্ছে এবং উগ্র ইসলামিক গোষ্ঠীগুলি চাপ প্রয়োগ করছে। এমতাবস্থায়, সামগ্রিক পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করে ভারত সরকারও বাংলাদেশের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।












