বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নারোদা মামলায় প্রথমে জেল হাজত এবং পরে হাসপাতালে বেশ কিছু দিন কাটানোর পর জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়িতেই রয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। নারদ মামলার তাপ উত্তাপ আপাতত কিছুটা কমলেও ফের একবার খবরের শিরোনামে উঠে এলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রত্না চট্টোপাধ্যায়। নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে রবিবার সকাল বেলা একটি ভিডিও পোস্ট করেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে দেখা যায় শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তিনি, প্রশ্ন মূলত নারদ কান্ডে সিবিআই গ্রেফতার এবং তার পরবর্তী সময়টুকু নিয়ে।
সেই সময় প্রশ্ন উঠেছিল, শোভনের পাশে প্রথম পর্বে যতটা ছিলেন রত্না, ছিলেন না বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সেই ঘটনাই কিছুটা প্রকাশ্যে আনতে এই ভিডিওতে প্রশ্ন উত্তর পর্বের আয়োজন। সাথে ছিল রত্না চট্টোপাধ্যায়ের উৎশৃংখল জীবনযাপনের প্রতি কটাক্ষও। শোভন বাবু জানান, সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে সবসময়ই তার পাশে ছিলেন বান্ধবী বৈশাখী। এমনকি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে অন্ন জলও ত্যাগ করেছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্সি কারাগারের সামনে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কান্নার ভিডিও এখন রীতিমতো পরিচিত সকলের কাছে। সাথে সাথে আজ বৈশাখী জানান, আইনি সাহায্য এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্যের যে দাবি করেছিলেন রত্না তা সম্পূর্ণ ভুল। সব ব্যবস্থাই করেছিলেন তিনি নিজে।
ভিডিওর সাথে সাথে এদিন কিছু ছবিও পোস্ট করা হয় রত্না চট্টোপাধ্যায়ের। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দোলনায় বসে আরো কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করছেন তৃণমূলের এই বিধায়ক। সেই ছবি দেখে শোভনের প্রশ্ন, এই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি কারা? এরা এর আগে তার বাড়িতে আসার যোগ্যতা রাখতেন না। পাল্টা দিয়েছেন রত্নাও, তিনি জানিয়েছেন দলের লোকের সঙ্গে ছিলাম ‘অন্য কারও বরের সঙ্গে নয়’। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সিবিআইয়ের হাতে শোভনবাবু গ্রেফতার হবার পরই নিজাম প্যালেসে ছুটে গিয়েছিলেন রত্না চট্টোপাধ্যায় এবং তার ছেলে ঋষি চট্টোপাধ্যায়। হাজির হয়েছিলেন হাসপাতালেও।
কিন্তু এরপর থেকে যখন হঠাৎ মনে হয় বরফ হয়তো বা গলছে, তখনই ফের একবার সম্পর্কে চিড় ধরা শুরু। কারণ চিঠি লিখে শোভন চট্টোপাধ্যায় পরিষ্কার জানিয়ে দেন, চিকিৎসা এবং আইন সংক্রান্ত যে কোন খবর নিতে হবে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। উডবার্নে ছেলের সঙ্গে দেখা করলেও পরে ছেলেকেও কাছে না আসতে দেবার ঘোষণা করেন শোভন। তাদের সম্পর্কের বরফ যে একটুও বলেনি তা প্রমাণ করতেই আজকে ফের ভিডিও বার্তা দিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। প্রশ্নকর্তা অবশ্যই বৈশাখী। মায়ের প্রভাবে ছেলে খারাপ হয়ে গিয়েছে বলেও এদিন আক্রমণ শানান শোভন। শুধু তাই নয় তার অভিযোগ তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।
শোভন জানান, হাসপাতালে ছেলেকে দেখা মাত্রই চলে যেতে বলেন তিনি। এমনকি নিজাম প্যালেসে তার এবং রত্নার মধ্যে কথা হয়েছে বলে যে ভ্রান্ত ধারণা আছে তাও এদিন ভেঙে দিয়ে তিনি বলেন, আমি ওকে পরিষ্কার চলে যেতে বলেছি। মাঝে জনপ্রিয় ধারাবাহিক শ্রীময়ীকে কেন্দ্র করে বেশকিছু মিম তৈরি হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়, যার চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন রত্না এবং বৈশাখী। এখানে রত্নাকে শ্রীময়ী এবং খল চরিত্র জুন আন্টিকে বৈশাখী বলে সম্বোধন করে বসেছিলেন অনেকেই। এদিন তাদেরকেও একহাত নেন শোভন-বৈশাখী। শুধু তাই নয়, আজ তাদের দাবি, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী মনোজিৎ মন্ডল এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রাক্তন স্ত্রী রত্না একসঙ্গে মিলে হানি ট্রাপে ফেলার চেষ্টা করেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। উঠে আসে রত্নার বাবা দুলাল দাসের প্রসঙ্গ। তার বিরুদ্ধেও এদিন আক্রমণ শানাতে ছাড়েননি এই যুগল।
৫৪ মিনিটের এই ভিডিওর পাল্টা উত্তর দিয়েছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “হাস্যকর কপাল! নিজেরাই নিজেদের ইন্টারভিউ নিচ্ছে।”
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এও বলেন, “একজনের কলেজের চাকরি গিয়েছে, অন্যজনের সবকিছু চলে গিয়েছে। যখন দেখছে আমরা কোন খবরই নেই খবরে আসতে হবে তো। তাই রত্না ও তার ছেলেমেয়েকে সামনে এনে কুৎসা করা শুরু হল।”
তিনি আরও বলেন, “নিজেদের নোংরা ঢাকতে আমার নামে মিথ্যে রটাচ্ছে ওরা। বেহালা পূর্বের মানুষ আমাকে দেখেই ৩৮ হাজার ভোটে জয়ী করেছেন। গায়ে কোনও নোংরা থাকলে দল আমাকে প্রার্থীও করত না। আর মানুষের আর্শীবাদও পেতাম না।’’
এদিন শোভন বৈশাখীকে কলঙ্কিত নায়ক নায়িকা বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। ফের একবার খবরের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এলেন শোভন-বৈশাখী এবং রত্না। আগামী দিনে, এই সমীকরণ কোন দিকে গড়ায় সে দিকে নজর থাকবে সকলের।