বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারতে ইলিশ পাঠানো নিয়ে সেই দুর্গাপুজোর আগে থেকে বাংলাদেশের (Bangladesh) সঙ্গে বাদানুবাদ তৈরি হতে দেখা যায়। মূলত ভারতে দুর্গাপুজোয় ইলিশ পাঠানো হবে না বলেই প্রথম সিদ্ধান্ত নেয় ওদেশের সরকার। আগে সেদেশের চাহিদা মেটানো হবে তারপর ভারতে পাঠানো হবে, এমনটাই জানানো হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এমনকি দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে ২৪ লক্ষ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তবে, ২৪ লক্ষ কেজি তো দূর ১০ লক্ষ কেজি পর্যন্ত ইলিশ রপ্তানি করা হয়নি। কিন্তু এমন হওয়ার পিছনে মূল কারণ কি?
ভারতে কমল বাংলাদেশের (Bangladesh) ইলিশ রপ্তানির পরিমাণ:
তথ্যসূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুজোতে ভারতে ২৪ লক্ষ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয় ওপার বাংলার (Bangladesh) সরকার। আর এই অনুমতির মেয়াদ ছিল গত সপ্তাহের শনিবার পর্যন্ত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে মেয়াদ শেষে এখনও পর্যন্ত ভারতে মাত্র সাড়ে ৫ লক্ষ কেজি ইলিশ পাঠানো হয়েছে। সরকারি অনুমতির পর মাত্র কয়েক শতাংশ ইলিশ পেয়েছে ওপার বাংলার লোকেরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে এই রপ্তানির পরিমাণ। মূলত বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে যশোরের বেনাপোল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। আর রপ্তানির পর আয় হয়েছে ৫৪ লক্ষ মার্কিন ডলার অর্থাৎ ৬৪ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা।
কেন এত কম ইলিশ রপ্তানি হল ভারতে: জানিয়ে রাখি, ভারতে এবার ইলিশ পাঠানোর জন্য ৪৯ টি প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ভারতকে মোট ২১টি প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানি করেছে। অর্থাৎ একথা স্পষ্ট আরও ২৮ টি প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানি করেনি। কিন্তু কেন? এই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন ইছানগরের মাসুদ ফিশ প্রসেসিং অ্যান্ড আইস কমপ্লেক্স। এবছর ৫০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছিল এই নামী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অনুমতি পাওয়ার পরও একটি ইলিশও রপ্তানি করা হয়নি।
আরও পড়ুন: অবিলম্বে ভারত ছাড়ুন….ট্রুডোর কারণেই একইসাথে কানাডার ৬ কূটনীতিককে বহিষ্কার করল দিল্লি
এই বিষয়ে, সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আশরাফ হোসেন জানিয়েছেন, “অনুমতি পাওয়ার পর কেজি প্রতি ইলিশ ১০ থেকে ১৮ ডলারে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলাম ভারতের ক্রেতাদের। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাইনি। তাই রপ্তানিও সম্ভব হয়নি।” এই সংস্থা ছাড়াও আরও কিছু সংস্থা আছে যারা অনুমতি পাওয়ার পরও সময়ের মধ্যে সঠিক পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চট্টগ্রামের প্যাসিফিক সী ফুডস। এই সংস্থা ৫০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছিল। কিন্তু রপ্তানি করেছে মাত্র সাড়ে ১৩ হাজার কেজি। এর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, কম পরিমাণ ইলিশ এবং উচ্চমানের দাম। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ৪৯ টি সংস্থার মধ্যে ৪৮ টি সংস্থাকে ৫০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৫ টি সংস্থা ৫ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করতে পেরেছে। এই ৫ টি সংস্থা হল- খুলনার বিশ্বাস ইন্টারন্যাশনাল, কক্সবাজারের জেএস এন্টারপ্রাইজ, পাবনার রুপালী ট্রেডিং কর্পোরেশন, ঢাকার সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ ও স্বর্ণালী এন্টারপ্রাইজ।
তবে শুধু এবছর নয় গত বছরেরও যদি রিপোর্ট দেখা যায়, সেখানেও দেখা গিয়েছে ৭৯ টি সংস্থাকে ৩,৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৮০২ টন। আর এবারেও সেই একই ঘটনা। এদিকে, এই ইলিশ রপ্তানির কারণে আজ ভারত ও বাংলাদেশের (Bangladesh) মধ্যে তৈরি হয়েছে বৈরিতার সম্পর্ক।